জামালগঞ্জে আশ্রয়ণ প্রকল্পে ভূমিহীনদের বরাদ্দ দেওয়া ঘর বিক্রির অভিযোগ উঠেছে। বিক্রি ভাড়া—হস্তান্তর চলছে সমানতালে। জামালগঞ্জের সুজাতপুর আশ্রয়ণ প্রকল্পের অনেকে ঘর বিক্রি করে চলে গেছেন তাদের পূর্বের বসত ভিটায়।
উপজেলার সাচনা বাজার ইউনিয়নের সুজাতপুর আশ্রয়ণ প্রকল্পের ৮টি ঘর ইতোমধ্যে বিক্রি হয়ে গেছে। আরও ৬টি ঘর বিক্রির জন্য দামদর হচ্ছে। প্রকৃত ভূমিহীন ও গৃহহীন, নদী ভাঙনের শিকার ব্যক্তিরা ২ বছর আগে উপজেলা প্রশাসন থেকে ঘর বরাদ্দ নিয়েছিলেন।
অভিযোগের বিষয়ে সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার প্রসাশনের পক্ষ থেকে প্রকল্প বাস্তবায়নের কর্মকর্তার তত্ত্বাবধানে বিগত ২ বছর আগে কাজ শেষ হয়। প্রতিটি ঘর নির্মাণে ২ লক্ষ ৮৬ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। ২ বছর আগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেঞ্চের মাধ্যমে ঘর উদ্বোধন করেন। এর পর সুজাতপুর ও আশপাশের নদী ভাঙন ভূমিহীন ও গৃহহীন ৮০টি পরিবারক ২ শতাংশ ভূমি কবুলত সহ ঘরের চাবি হস্তান্তর করা হয়। ঘরে উঠার দেড় বছরের মধ্যেই অনেকে বরাদ্দকৃত ঘর বিক্রি করে দিয়েছেন। কেউ নিজে না থেকে ভাড়া হিসাবে আত্মীয় স্বজনকে দিয়েছেন।
৩১ নম্বর ঘর বরাদ্দ পেয়েছেন সুজাতপুর গ্রামের আব্দুল আওয়াল। তিনি স্থানীয় বাসিন্দা শিরিন আক্তারের নিকট ঘর বিক্রয় করে দিয়েছেন। ৪০ নম্বর ঘরের আলেক মিয়া বরাদ্দকৃত ঘরটি বিক্রি করেন ফেনারবাক ইউনিয়নের লক্ষীপুর গ্রামের আবু তাহেরের নিকট। ৬২ নম্বর ঘর পেয়েছিলেন মো. সুহেল মিয়া, তিনি আমরিয়া গ্রামের আরিফুন্নেছা বেগমের কাছে ঘর বিক্রি করেন। ১২০ নম্বর ঘরের পেয়েছিলেন পলকপুর গ্রামের সুমি আক্তার, তিনি নুরুল হকের কাছে ঘর বিক্রি করে দিয়েছেন। সুজাতপুর গ্রামের ৬৪ নম্বর ঘর পেয়েছেন আইনুল হক, তিনি একই গ্রামের ফাতেমা বেগমের নিকট ঘর বিক্রি করে দিয়েছেন। ৭৯ নম্বর ঘর পেয়েছিলেন একই গ্রামের জাহাঙ্গীর হোসেন, তিনি স্বামী পরিত্যাক্তা বুলবুল খাতুনের কাছে ৫০ হাজার টাকায় ঘর বিক্রয় করে দিয়েছেন। ৪৭ নম্বর ঘর পেয়েছিলেন তাহেরা বেগম, তিনি রুপাবালী গ্রামের সাহেলা বেগমের কাছে বিক্রয় করে দিয়েছেন। ৭৭ নম্বর ঘর পেয়েছিলেন রুপাবালী গ্রামের গুলনাহার, তিনি সুজাতপুর গ্রামের সোবায়েল এর নিকট বিক্রয় করে দিয়েছেন। প্রতিটি ঘর ৪০ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকায় বিক্রি করা হয়েছে বলে জানা যায়।
এছাড়া বরাদ্দ পাওয়ার পর থেকে বরাদ্দকৃত ঘর পাওয়া মফিদুল, রুবেল, শাহজামাল, দিলারা বেগম, সুনারা খাতুন, মেহেরুন্নেছা দীর্ঘদিন ধরে তাদের বরাদ্দকৃত ঘরে বসবাস করছেন না। ঘর তালাবদ্ধ করে অন্যত্র বসবাস করছেন।
আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দা নুর উদ্দিন, ইসলাম নুর, আব্দুজ জাহির, মোশারফ হোসেন, আক্কাস মিয়া ও শাহাব উদ্দিন জানান, তড়িঘড়ি করে ঘর করার কারণে অনেকের ঘরের ভিট ভেঙে গেছে। বৃষ্টি এলে ঘর দিয়ে পানি পড়ে। তাছাড়া ঘর দেওয়ার সময় সঠিকভাবে গৃহহীন ভূমিহীন যাচাই না করার কারণে অনেকে মিথ্যা তথ্য দিয়ে ভূমিহীন গৃহহীন সেজে আশ্রয়ণ প্রকল্পে ঘর বরাদ্দ নিয়েছেন। সেজন্য অনেকেই ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকার ঘর বিক্রি করে নিজ ভিটায় চলে গেছেন। আমাদের আশ্রয়ণ প্রকল্পে ইতোমধ্যে ৮টি ঘর বিক্রয় হয়েছে। আর কয়েকটি ঘর বিক্রয়ের আলাপ আলোচনা চলছে। উপজেলা প্রশাসনের নিকট এবিষয়ে লিখিত জানিয়েছি। কিন্তু এখন ও কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। আশা করি অভিযোগের বিষয়ে দ্রুত তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
অভিযুক্ত ৭৯ নম্বর ঘরের ক্রেতা স্বামী পরিত্যাক্তা বুলবুল বেগম জানান, আমার কোন ঘর বাড়ি না থাকায় ঢাকার কামরাঙ্গীর চরে অন্যের বাসায় কাজ করতাম। অনেক কষ্টে টাকা রোজগার করে জাহাঙ্গীরের নিকট থেকে ৫০ হাজার টাকায় ঘর কিনেছি। আমি ২ মেয়ে, ৩ ছেলে নিয়ে খুবই কষ্টে চলছি। আমার যাওয়ার কোন জায়গা নাই।
ঘর যারা পেয়েছিল, তারা কোথায় গেছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তারা পূর্বের বাড়িতে বসবাস করেন।
সাচনাবাজার ইউনিয়নের সুজাতপুর গ্রামের ইউপি সদস্য আব্দুল আলী জানান, আমার ওয়ার্ডের সুজাতপুর আশ্রয়ণ প্রকল্পে ২ বছর আগে ৮০টি ঘর বরাদ্দ দেওয়া হয়। দেড় বছরের মাথায় ৮টি পরিবার বিভিন্ন লোকের কাছে ঘর বিক্রি করে দিয়েছেন। আরো কয়েকটি ঘর বিক্রির জন্য দামদর করছেন। এছাড়া ৭টি ঘর বরাদ্দ পাওয়ার পর থেকেই বন্ধ রয়েছে। আমি উপজেলা প্রশাসনের নিকট জোর দাবি জানাচ্ছি বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য।
জামালগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুশফিকীন নুর জানান, অভিযোগ পেয়েছি। অভিযুক্তদের বিষয়ে তদন্ত চলছে। অভিযোগের সত্যতা পেলে তাদের বিরুদ্ধে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।