মসজিদের ইমামতিতে বাধা দেওয়ার জেরে হবিগঞ্জ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার তিন গ্রামবাসীর মধ্যে প্রায় ৬ ঘন্টাব্যাপী সংঘর্ষ ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে।
এসময় উশৃঙ্খল লোকজন রেলস্টেশনে আক্রমণ করলে সিলেট বিভাগের সঙ্গে সারাদেশের রেল যোগাযোগ টানা ৫ ঘন্টা বন্ধ থাকে।
শুক্রবার (১৬ আগস্ট) দুপুর ২টা থেকে রাত সাড়ে ৭টা পর্যন্ত তিন গ্রামবাসীর মধ্যে কয়েক দফায় সংঘর্ষ ও আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণের ঘটনা ঘটে। পুলিশ রাতে ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার হরষপুর দারুল উলুম মাদরাসা শিক্ষক বশির আহমেদ মাদ্রাসা মসজিদে জুমআর নামাজে ইমামতি করতে চেয়েছিলেন। ছাত্ররা এতে বাধা দিলে লোকজন দুই পক্ষে ভাগ হয়ে ঝগড়াতে লিপ্ত হয়।
এরপর নামাজ শেষে হরষপুর গ্রামবাসীর সঙ্গে বশির আহমেদের জন্মস্থান ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলার বুল্লা ও এখতিয়ারপুর গ্রামবাসী সংঘর্ষে লিপ্ত হয়।
এ সময় কিছু উচ্ছৃঙ্খল লোক ঘটনার সময় হরষপুর রেলস্টেশনে আক্রমণ করে ও আশপাশের দোকানে লুটপাট চালায়।
স্থানীয় সূত্র জানায়, শুক্রবার হঠাৎ জুম্মা নামাজের পর উভয় গ্রামের লোকজন মসজিদের ইমামকে নিয়ে বাকবিতন্ডায় জড়িয়ে পড়েন পরে প্রাক-হরষপুর গ্রামের লোকজন মাইকে ঘোষণা দিলে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে মাধবপুর উপজেলার হরষপুর রেলস্টেশনের ব্যবসায়ীদের উপর অতর্কিত হামলা করে এতে প্রায় অর্ধ শতাধিক মানুষ আহত হয় এবং আশংকাজনক অবস্থায় ধর্মঘর ইউনিয়নের শিয়ালউড়ি গ্রামের রাজু আহমেদ, সুলতানপুর গ্রামের জামালসহ ৫ জনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়।
অন্যান্য আহতরা হলেন- সামিদ মিয়া (৩৫), আরমান মিয়া (১৭) সুচন মিয়া (২৮), কাউছার আহমেদ (৩২), জামাল মিয়া (৫৫), ইয়াসিন শাহ (২১), রাসেল (১৬), ফুল মিয়া (২৮) চান মিয়া (৪৫), মঈদ উদ্দিন রাজু (২৪)।
সংঘর্ষে হরষপুর রেলস্টেশন বাজারের প্রায় ৫০টি দোকানপাট ভাংচুর ও লুটপাট করা হয়। প্রায় তিনঘন্টা ব্যাপী এই সংঘর্ষ চলে।
স্থানীয় ধর্মঘর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ পারুল জানায়, বিজয়নগরের কতিপয় সন্ত্রাসীরা মাদ্রাসার মসজিদের অজুহাতে হরষপুর বাজারের অন্তত ৩০ থেকে ৪০ জন ব্যবসায়ীর দোকানপাট ভাংচুর ও লুট করেছে। অনেকে আহত হয়েছে। তারা নিরস্ত্র মানুষের উপরে হামলা করে নজিরবিহীন ঘটনা সৃষ্টি করেছে।
মাধবপুরের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাবেদ মাসুদ জানান, বর্তমানে পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত রয়েছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও পুলিশের সহযোগীতায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে রয়েছে। রেলওয়ে স্টেশনের ব্যারিয়ার পড়ে থাকার কারণে আমাদের ঘুরে আসতে কিছুটা দেরি হয়েছে। তবে এ বিষয়ে তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
এ ঘটনায় ঢাকা থেকে সিলেটগামী ও সিলেট থেকে ঢাকাগামী দুইটি জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস এবং চট্টগ্রামগ্রামী পাহাড়িকা এক্সপ্রেস রাস্তায় আটকা পড়ে।
হরষপুর রেলস্টেশনের মাস্টার মো. জাহিদ হোসেন জানান, উচ্ছৃঙ্খল লোকজন স্টেশনে আক্রমণ করে কাঁচ ভেঙ্গে দিয়েছে। তিনটি ট্রেন মনতলা ও মুকন্দপুর স্টেশনে বিকেল ৩টা থেকে আটকে আছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের পর সাড়ে ৭টায় সেগুলো গন্তব্যের দিকে ছেড়ে যায়।
ধর্মঘর ইউপি চেয়ারম্যান শামছুল ইসলাম কামাল জানান, প্রায় ছয় ঘন্টা ধরে থেমে থেমে সংঘর্ষ হওয়ার পর পুলিশ ঘটনাস্থলে এসেছে। রেলস্টেশন ও পাশের দোকানগুলোতে ব্যাপকভাবে ভাঙচুর ও লুটপাট হয়েছে।