বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব শায়খুল হাদিস আল্লামা মামুনুল হক বলেছেন, ১৭ বছর ক্ষমতায় থেকে শেখ হাসিনা শুধু প্রতিশোধ নিয়েছেন, হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছেন। ফ্যাসিষ্ট শেখ হাসিনার সময়ে প্রতিটি খুন-গুমের বিচার বাংলার মাটিতে হবে। ছাত্র জনতার আন্দোলনের প্রতিটি হত্যাকান্ডের বিচার করতে হবে। গতকাল বৃহস্পতিবার সিলেট, সুনামগঞ্জ ও হবিগঞ্জে পৃথক গণসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত ও আহতদের স্মরণে এবং পতিত স্বৈরশাসক ও তার সহযোগীসহ সকল অপরাধীদের বিচারের দাবিতে খেলাফত মজলিসের উদ্যোগে প্রতিটি গণসমাবেশে ছিল জনতার ঢল।
আল্লামা মামুনুল হক সকলকে সজাগ থাকার আহবান জানিয়ে বলেন, বাংলাদেশকে ভারতের অঙ্গ রাজ্য বানানোর যে স্বপ্ন শেখ হাসিনা দেখেছিল ৫ আগষ্ট ছাত্র-জনতার বিপ্লবের মধ্য দিয়ে তা ধুলিস্মাৎ হয়ে গেছে। গণঅভ্যুত্থানকে ব্যর্থ করে দিতে শেখ হাসিনা ভারতে বসে বিভিন্নভাবে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ও জনগনকে বিভ্রান্ত করার অপচেষ্টা করে যাচ্ছেন। নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে দলমত নির্বিশেষে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।
বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস সিলেট জেলা ও মহানগর শাখার যৌথ উদ্যোগে রেজিস্টারী মাঠে মহানগর শাখার সভাপতি মাওলানা গাজি রহমত উল্লাহ এর সভাপতিত্বে, সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব মাওলানা এমরান আলম ও জেলার সাধারণ সম্পাদক প্রিন্সিপাল মাওলানা ফখরুল ইসলামের যৌথ পরিচালনায় বিশাল সমাবেশে অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন, সংগঠনের নায়বে আমির মাওলানা রেজাউল করিম জালালী, যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা জালালুদ্দীন আহমদ, মাওলানা আতা উল্লাহ আমিন, মাওলানা আব্দুল আজিজ, মাওলানা তোফাজ্জল হোসাইন মিয়াজী, কেন্দ্রীয় সমাজকল্যাণ সম্পাদক মাওলানা সামিউর রহমান মুসা, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক মাওলানা ফয়েজ আহমদ।
সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে আল্লামা মামুনুল হক আরো বলেন, সারাদেশের মানুষের আকাঙ্খা বুঝতে পেরে সাধারণ শিক্ষার্থীরা ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মাধ্যমে হাসিনা সরকার হটিয়েছে। এর ফলে নতুন বাংলাদেশ গড়ার উদ্দীপনা সৃষ্টি হয়েছে। তিনি সিলেটের নিহত সাংবাদিক এটিএম তুরাব, শাবিপ্রবি শিক্ষার্থী রুদ্ধ সেন এবং গোলাপগঞ্জ সহ ছাত্র আন্দোলনে সকল শহীদদের মাগফেরাত কামনা করে সুষ্ঠু বিচার ও তাদের পরিবারের ক্ষতিপূরণ ও আহতদের সুস্থতা কামনা করেন। তিনি সিলেটসহ সারাদেশের সর্বস্তরের শিক্ষার্থীদের ধন্যবাদ জানান।
একটি সুশৃঙ্খল ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ দেখতে সকলে মিলে উপদেষ্টাদের সহযোগিতা করার আহ্বান জানিয়ে আল্লামা মামুনুল হক বলেন, ফ্যাসিষ্ট শেখ হাসিনা সীমাহীন লুটপাটের মধ্য দিয়ে বিগত ১৬ বছরে বাংলাদেশের অর্থনীতিকে এক মহা সংকটে পতিত করে গেছেন। এর থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হলে বিএনপিসহ সকল দেশপ্রেমিক রাজনৈতিক দলকে অন্তর্বতীকালীন সরকারকে সহযোগিতা করতে হবে। তিনি ৭২ এর সংবিধান কে ভারতের পক্ষ থেকে চাপিয়ে দেওয়া সংবিধান উল্লেখ করে দেশের অধিকাংশ মানুষের ইচ্ছা এবং অভিপ্রায়ের ভিত্তিতে সংবিধান সংস্কারের দাবি জানান।
ভারতের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ভারত এদেশের মানুষের কথা ভাবেনি, তারা শুধু আওয়ামীলীগের জন্য কাজ করেছে। তাই এদেশের মানুষ তাদের শিক্ষা দিয়েছে। ভারতের কোন দালাল সরকার বাংলাদেশের ক্ষমতায় আর বসতে পারবে না। তিনি সব বৈষম্য দূর করে সকল রাজনৈতিক দলকে রাজনৈতিক ভেদাভেদের উর্ধ্বে গিয়ে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে বাংলাদেশকে নতুনভাবে বিনির্মাণের আহবান জানান।
দেশে কোনো সংখ্যালঘু নির্যাতনের ঘটনা ঘটেনি। ঘটবেও না। পুলিশ বাহিনীর উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, যারা আওয়ামী লীগের ক্যাডার বাহিনী বা দালাল হিসাবে কাজ করেছেন, তাদের অন্যায় কাজে ব্যবহৃত হয়েছেন। তা আর করবেন না। জনগণ আপনাদের সহযোগিতায় থাকবে। শেখ হাসিনার বাবার ভাষ্কর্য নির্মাণ না করতে বলেছিলেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, মূর্তিগুলো তার বাবার অপমানের কারণ হতে পারে বলে তখন বলেছিলাম। বলেছিলাম, আপনার টাকায় আপনার বাবার মূর্তি নির্মাণ করে ঘরে রেখে দিন। আমাদের টাকা অপচয় করবেন না। তখন মানেননি তিনি। মামুনুল হক অন্তবর্তীকালীন সরকারের উদ্দেশ্যে বলেন, প্রতিটি হত্যাকান্ডের বিচার করতে হবে। এদেশের মাটিতে শেখ হাসিনাকে এনে বিচারের ব্যবস্থা করতে হবে। জনগণ আপনাদের পাশে থাকবে। গণসমাবেশে সভাপতিত্ব করেন জেলা খেলাফত মজলিশের সভাপতি মাওলানা মুফতি আজিজুল হক। গণসমাবেশে অন্যদের বক্তব্য রাখেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির অন্যতম সদস্য মাওলানা আতাউল্লাহ আমিনী, শায়খুল হাদিস মাও. জালাল উদ্দিন, জেলা খেলাফত মজলিশের সাধারণ সম্পাদক হাফিজ সৈয়দ জয়নুল ইসলাম প্রমূখ।
সুনামগঞ্জ :
আমাদের সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিশ সুনামগঞ্জ জেলা শাখার উদে্যাগে বৃহস্পতিবার দুপুরে সুনামগঞ্জ শহরের পুরাতন বাসষ্টেশন এলাকায় গণসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তবে্য শায়খুল হাদীস আল্লামা মামুনুল হক বলেছেন, হিংসা-বিদ্বেষমুক্ত এবং বৈষম্যহীন আগামীর বাংলাদেশ হবে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির সমৃদ্ধশালী একটি নতুন বাংলাদেশ। আলেম সমাজের নেতৃবৃন্দকে সকল শ্রেণী পেশার মানুষকে নিয়ে দেশে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে কাজ করতে হবে। মামুনুল হক বলেন, দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ধর্মের কাজ, বাসস্থান ও চলাফেরা নিরাপদ রাখার ব্যবস্থা করা হবে। বিগত ৫ আগষ্ট থেকে ৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এক মাসে দেশে কোনো সংখ্যালঘু নির্যাতনের ঘটনা ঘটেনি। ঘটবেও না। পুলিশ বাহিনীর উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, যারা আওয়ামী লীগের ক্যাডার বাহিনী বা দালাল হিসাবে কাজ করেছেন, তাদের অন্যায় কাজে ব্যবহৃত হয়েছেন। তা আর করবেন না। জনগণ আপনাদের সহযোগিতায় থাকবে। শেখ হাসিনার বাবার ভাষ্কর্য নির্মাণ না করতে বলেছিলেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, মূর্তিগুলো তার বাবার অপমানের কারণ হতে পারে বলে তখন বলেছিলাম। বলেছিলাম, আপনার টাকায় আপনার বাবার মূর্তি নির্মাণ করে ঘরে রেখে দিন। আমাদের টাকা অপচয় করবেন না। তখন মানেননি তিনি। মামুনুল হক অন্তবর্তীকালীন সরকারের উদ্দেশ্যে বলেন, প্রতিটি হত্যাকান্ডের বিচার করতে হবে। এদেশের মাটিতে শেখ হাসিনাকে এনে বিচারের ব্যবস্থা করতে হবে। জনগণ আপনাদের পাশে থাকবে। গণসমাবেশে সভাপতিত্ব করেন জেলা খেলাফত মজলিশের সভাপতি মাওলানা মুফতি আজিজুল হক। গণসমাবেশে অন্যদের বক্তব্য রাখেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির অন্যতম সদস্য মাওলানা আতাউল্লাহ আমিনী, শায়খুল হাদিস মাও. জালাল উদ্দিন, জেলা খেলাফত মজলিশের সাধারণ সম্পাদক হাফিজ সৈয়দ জয়নুল ইসলাম প্রমূখ।
মাধবপুর :
মাধবপুর (হবিগঞ্জ) থেকে নিজস্ব সংবাদদাতা জানান, ছাত্র-জনতার বিল্পবে শহীদদের রুহের মাগফেরাত ও আহতদের আশু রোগমুক্তি কামনায় বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস মাধবপুর উপজেলা শাখার উদ্যোগে বুধবার সন্ধ্যায় ষ্টেডিয়াম মাঠে এক দোয়া মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন আল্লামা মামুনুল হক। বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মাধবপুর উপজেলা শাখার সভাপতি মাওলানা মহিউদ্দিন সেলিমের সভাপতিত্বে দোয়া মাহফিলে বক্তব্য রাখেন সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা জালালউদ্দিন আহমদ, যুগ্ম মহাসিচব মাওলানা আতাউল্লাহ আমিন, যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আব্দুল আজিজ, কেন্দ্রীয় সদস্য মাওলানা আবুল হাসনাত জালালী, শাইকুল হাদিস পরিষদের সহসভাপতি ও মাধবপুর উপজেলা ওলামা পরিষদের সাধারন সম্পাদক মুফতি ওয়াজেদ আলী, কেন্দ্রীয় সদস্য মাওলানা আনোয়ার রাজি, মাওলানা জহিরুল ইসলাম, মাওলানা আব্দুল্লা আকিলপুরী, মাওলানা সিরাজুল ইসলাম মিরপুরী, মাওলানা মুকসিনুল হাসান, মাওলানা শুয়াইব আহম্মদ আশরাফী, দৈনিক আমার দেশের সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার, লন্ডন নির্বাসিত সাংবাদিক অলিউল্লাহ নোমান, হাফেজ মাওলানা কেফায়েতউল্লাহ, উপজেলা জামায়াত নেতা মৌলানা আলা উদ্দিন,মাধবপুর প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি আলাউদ্দিন আল রনি, বাংলাদেশ যুব মজলিসের সভাপতি মাওলানা ইসমাঈল আহমদ, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মাধবপুর সমন্বয়ক সিরাজুল ইসলাম তানজিল প্রমুখ।
জগন্নাথপুর :
জগন্নাথপুর (সুনামগঞ্জ) থেকে নিজস্ব সংবাদদাতা জানান, জগন্নাথপুর পৌর পয়েন্টে বৃহস্পতিবার দুপুরে পথসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন আল্লামা মামুনুল হক। বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস উপজেলা শাখার সভাপতি মাওলানা আব্দুল মুনঈম কামালী শাহীনের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক মাওলানা সাইফুর রহমান সাজাওয়ারের পরিচালনায় এতে অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন, যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা জালাল উদ্দিন আহমদ, মাওলানা আতাউল্লাহ আমীন, কেন্দ্রীয় আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক মাওলানা শায়খ ফয়েজ আহমদ প্রমুখ। পরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত, আহত ও বন্যা দুর্গতদের জন্য দোয়া করেন দলটির মহাসচিব মামুনুল হক।
গোবিন্দগঞ্জ :
গোবিন্দগঞ্জ, ছাতক থেকে নিজস্ব সংবাদদাতা জানান, বৃহস্পতিবার বিকেলে গোবিন্দগঞ্জে এক পথ সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের কেন্দ্রীয় মহাসচিব আল্লামা মামুনুল হক। বক্তব্যে তিনি বলেন, ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শেখ হাসিনার পতনের মাধ্যমে দেশের মানুষ দ্বিতীয় বারের মতো স্বাধীনতা লাভ করে। তিনি দেশের সম্পদ লুণ্ঠনকারী, বিদেশে টাকা পাচারকারী এবং আওয়ামী এমপি,মন্ত্রীসহ সকল দুর্নীতিবাজ ব্যবসায়ীদের বিচারের দাবি জানান। পথ সভায় হাসনাবাদ দারুল হাদিস মাদ্রাসার অধ্যক্ষ শায়খ মাওলানা আব্দুল কাদিরের সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য রাখেন অধ্যক্ষ মাওলানা আব্দুল হান্নান, অধ্যক্ষ মাওলানা আব্দুস সালাম আল মাদানী সহ খেলাফত মজলিস,জামাত ও হেফাজতের নেতৃবৃন্দ।