তার বিরুদ্ধে সোমবার (৩০ সেপ্টেম্বর) বেলা আড়াইটায় সিলেট জেলা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে বিস্তর অভিযোগ তুলে ধরেন গোয়াইনঘাট কলেজের অনার্স চতুর্থ বর্ষের রাষ্ট্র বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র ও উপজেলার পশ্চিম আলীরগাঁও ইউনিয়নের পুকাশ দিঘিরপাড় গ্রামের নজরুল ইসলামের ছেলে মো. মারজানুল আযহার জুনেদ (২২)। তিনি উপজেলার সাধারণ শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলন করেছেন বলে জানান।
লিখিত বক্তব্যে মারজানুল আযহার জুনেদ বলেন- গোয়াইনঘাটে ৫ আগস্টের আগে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় প্রকাশ্যে একজন সমন্বয়কই ছিলেন। তিনি হলেন- উপজেলার গোয়াইন গ্রামের বাসিন্দা আমিরুল ইসলাম। এছাড়া প্রকাশ্যে কাউকে সমন্বয়কের ভূমিকা পালন করতে দেখা যায়নি। কিন্তু ৫ আগস্টের পর আজমল হোসেন নিজেকে সমন্বয় দাবি করে একটি বাহিনী গঠন করে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে প্রকাশ্যে চাঁদাবাজিসহ সন্ত্রাসী করে বেড়াচ্ছেন। এতে স্থানীয় সাধারণ মানুষ, ব্যবসায়ী ও শিক্ষার্থীসহ সকল শ্রেণি-পেশার মানুষ ভুয়া এই সমন্বয়কের কর্মকাণ্ডে চরম ক্ষুব্দ হয়ে তার বিরুদ্ধে অবস্থান নেন এবং প্রতিবাদী হন। এরই ধারবাহিকতায় ২৪ সেপ্টেম্বর (মঙ্গলবার) বেলা সাড়ে ১১ টায় গোয়াইনঘাট উপজেলার অর্ধশতাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ৫ শতাধিক শিক্ষার্থী গোয়াইনঘাট সরকারি কলেজে জড়ো হয়ে আজমল হোসেন ও তার বাহিনীর বিরুদ্ধে এক বিশাল মানববন্ধন এবং প্রতিবাদ সভা করেন। খবর পেয়ে আজমল হোসেন তার বাহিনী নিয়ে গোয়াইনঘাট সরকারি কলেজে অনুপ্রবেশ করে মানববন্ধনকারী শিক্ষার্থীদের উপর অতর্কিত হামলা চালান। এছাড়াও ছাত্রীদের শ্লীলতাহানির চেষ্টা করেন হামলাকারীরা। এসময় সাধারণ শিক্ষার্থীরা প্রতিবাদী হয়ে আজমল ও তার বাহিনীর সদস্যদের ধাওয়া করে কলেজ ক্যাম্পাস থেকে বের করে দেন। এ ঘটনার কিছুক্ষণ পর কলেজ ক্যাম্পাসে আজমল হোসেন তার বাহিনী নিয়ে পুনরায় ঢুকে সেখানে থাকা স্থানীয় সাংবাদিক তানজিল হোসেনের উপর অতর্কিত হামলা চালান এবং একটি কক্ষে আটক করে রাখেন। পরে সেনাবাহিনী টিমের সহায়তায় সাংবাদিক তানজিল হোসেনকে উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় পরে তানজিলা হোসেন বাদী হয়ে গোয়াইনঘাট থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
সংবাদ সম্মেলনে জুনেদ আরও বলেন- ২৩ সেপ্টেম্বর বিকালে আজমল হোসেন তার বাহিনীর কিবরিয়া আহমদ (২০), রুহুল আমিন (৩০), খসরুল আমিন (২৮)-সহ আরও ৪/৫ জনকে নিয়ে লেঙ্গুড়া ইউনিয়নের লেঙ্গুড়া গ্রামের পূর্ব দিকে জেলা প্রশাসকের লিজ দেওয়া বালুমহালের মধ্যবর্তী স্থান দিয়ে কয়েকজন শ্রমিক নৌকা নিয়ে গোয়াইনঘাট আসার পথে নৌকা আটকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে এবং ২ লক্ষ টাকা চাঁদা দাবি করে। বিষয়টি বালু ব্যবসায়ীরা গোয়াইনঘাট উপজেলার ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দকে অবহিত করেন। এতে আজমল ও তার বাহিনী স্থানীয় বালু ব্যবসায়ীদের উপর আরো ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে। এরই জের ধরে ওই দিনই বেশ কয়েকজন শ্রমিক বালু ক্রয় করে স্টিলের নৌকা বোঝাই করে সিলেট শহরের দিকে রওয়ানা দিলে গোয়াইনঘাটের উল্লিখিত স্থানে আসামাত্র আজমল ব্যবসায়ীদের কাছে ২ লক্ষ টাকা চাঁদা দাবি করে। বালু ব্যবসায়ীরা এতে অসম্মতি জানিয়ে প্রতিবাদ করলে আজমল, কিবরিয়া, রুহুল আমিন, খসরুল আমিন ও তাদের সহযোগিরা বালু ব্যবসায়ীদের উপর বাঁশের লাঠি, স্টিলের পাইপ, লোহার রড নিয়ে হামলা চালান। এতে বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ী আহত হন। আজমল এসময় ব্যবসায়ী উজ্জ্বল মিয়ার (২৫) সঙ্গে থাকা সাড়ে ২৮ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেন। এসময় তাদের চিৎকারে স্থানীয়রা এগিয়ে এসে ব্যবসায়ীদের উদ্ধার করেন। এ ঘটনায় পরে উজ্জল মিয়া বাদী হয়ে গোয়াইনঘাট থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।
ভুয়া সমন্বয়ক আজমল হোসেন ও তার বাহিনীর অত্যাচারে অতিষ্ঠ স্থানীয়রা- এমনটি দাবি করে তাদের গ্রেফতার এবং শাস্তির দাবিতে গত ২৬ সেপ্টেম্বর (বৃহস্পতিবার) গোয়াইনঘাটবাসীর ব্যানারে উপজেলা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে গণস্বাক্ষর গ্রহণ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়। পরে গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবরে একটি স্মারকলিপি প্রদান করেন সাধারণ জনতা।
আজমল হোসেন ও তার বাহিনীর সদস্যদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে প্রশাসন এবং সিলেটের মূল সমন্বয়কদের প্রতি পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য সংবাদ সম্মেলনে অনুরোধ জানিয়েছেন মো. মারজানুল আযহার জুনেদ।