আলোকস্বল্পতায় আগেভাগেই খেলা শেষ হওয়ায় যেন নিঃশ্বাস ছেড়ে বাঁচল বাংলাদেশ। যেভাবে একের পর এক উইকেট বিলচ্ছিলেন ব্যাটাররা তাতে এমনটা মনে হতেই পারে।
চট্টগ্রাম টেস্টের দ্বিতীয় দিন শেষে বাংলাদেশের সংগ্রহ ৪ উইকেটে ৩৮ রান। দক্ষিণ আফ্রিকা প্রথম ইনিংসে করেছে ৬ উইকেটে ৫৭৫ রান। হাতে ৬ উইকেট নিয়ে এখনও ৫৩৫ রানে পিছিয়ে বাংলাদেশ। উইকেটে আছেন অধিনায়ক নাজমুল হোসেন(৪*) ও মুমিনুল হক(৬*)।
দক্ষিণ আফ্রিকার ইনিংসে সেঞ্চুরি করেছেন তিনজন—ডি জর্জি, স্টাবস ও মুল্ডার। তাইজুল নিয়েছেন ৫ উইকেট।
এর আগে এক ম্যাচে তিনজনের ক্যারিয়ারের প্রথম শতকের দেখা পাওয়ার ঘটনা ঘটেছে একবার। ১৯৪৮ সালে দিল্লিতে ভারতের বিপক্ষে ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি করেছিলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের গ্যারি গোমেজ, রবার্ট ক্রিশ্চিয়ানি ও ক্লায়েড ওয়ালকট।
আরও একবার ব্যর্থ বাংলাদেশের টপ অর্ডার। রানের খাতাই খুলতে পারেননি ওপেনার সাদমান ইসলাম। রাবাদার বলে খোঁচা মেরে বিলিয়েছেন উইকেট। সতীর্থর চোটে পাওয়া সুযোগ কাজে লাগাতে পারেননি জাকির হাসান তিনিও রাবাদার বলে ক্যাচ দিয়েছেন একই জায়গায়।
২১ রানে দ্বিতীয় উইকেট হারানো বাংলাদেশ পরের ওভারে হারায় মাহমুদুল হাসান জয়কে (২১ বলে ১০)। ডেন পিটারসরে বলে দ্বিতীয় স্লিপে ক্যাচ দিয়েছেন এই ওপেনার। পরের ওভারে কেশব মহারাজের বলে বোল্ড হয়েছেন নাইটওয়াচম্যান হিসেবে নামা হাসান মাহমুদ (৭ বলে ২)। ৩২ রানে ৪ উইকেট নেই বাংলাদেশের।
বাংলাদেশের ৪ উইকেটের দুটি নিয়েছেন আইসিসি টেস্ট র্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষ বোলার রাবাদা। একটি করে নিয়েছেন কেশাভ মহারাজ ও ডেন প্যাটারসন।
৮১ ওভারে ২ উইকেটে ৩০৭ রান নিয়ে দিন শুরু করে দক্ষিণ আফ্রিকা। ১৪১ রানে ছিলেন ডি জর্জি, ১৮ রানে বেডিংহ্যাম।
প্রথম ঘণ্টা উইকেটহীন থাকার পর নিজের টানা তিন ওভারে তিনটি শিকার ধরেন তাইজুল। লং অফ দিয়ে তাইজুলকে বিশাল ছক্কা হাঁকানোর পরের বলেই বোল্ড হয়ে যান বেডিংহ্যাম। ৭৮ বলে ৫৯ রান এসেছে তার ব্যাট থেকে।
নিজের পরের ওভারের শেষ বলে সবচেয়ে বড় বাধা ডি জর্জিকে এলবিডব্লিউয়ের ফাঁদে ফেলেন তাইজুল। ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি ইনিংসকে ১৭৭ রানে নিয়ে গিয়ে থেমেছেন জর্জি। ২৬৯ বলের ইনিংসটি সাজিয়েছেন ১২টি চার ও ৪ ছক্কায়।
নিজের টানা তৃতীয় ওভারে তাইজুলের শিকার কাইল ভেরেইনা। এই মিডলঅর্ডারও এলবিডব্লিউ থেকে বাঁচেননি রিভিউ নিয়ে। ২ উইকেটে ৩৮৬ থেকে মুহূর্তেই স্কোরবোর্ড হয়ে যায় ৫ উইকেট ৩৯১।
মিরপুর টেস্টের প্রথম ইনিংসে পাঁচ ও ম্যাচ ৮ উইকেট নেওয়া তাইজুল চট্টগ্রামে দক্ষিন আফ্রিকার প্রথম পাঁচ উইকেটই নিয়েছেন তিনি। ক্যারিয়ারে এটি তার ১৪তম পাঁচ উইকেট শিকার। এরই মধ্য দিয়ে কিংবদন্তি বাঁহাতি স্পিনার বিষেন সিং বেদির পাশে বসেন তাইজুল। বেদিও টেস্টে ১৪বার ৫ উইকেট নিয়েছিলেন।
তবে বেদির যেখানে ১৪ বার ৫ উইকেট নিয়েছিলেন ৬৭ টেস্টে। সেখানে তাইজুল তাকে এখানে ছুঁয়ে ফেললেন ৪৯তম টেস্টেই।
দ্বিতীয় সেশনের চতুর্থ ওভারে উইকেটের দেখা পেয়েছিলেন নাহিদ রানা। এরপর আর উইকেটের দেখা পাওয়া যায়নি। সপ্তম উইকেটে উইয়ান মুল্ডার ও সেনুরান মুতুসামি জুটি থেকে আসে অবিচ্ছিন্ন ১৫০ রান।
তাইজুলকে ছক্কায় উড়িয়ে ক্যারিয়ারের প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন মুল্ডার। বাংলাদেশের ঘাড়ে বিশাল রানের বোঝা চাপিয়ে সাথে সাথে ইনিংস ঘোষণা করে দক্ষিণ আফ্রিকা।
১৫০ বলে ১০৫ রানে অপরাজিত থেকেছেন মুল্ডার। ৮টি চার ও ৪টি ছক্কায় ইনিংসটি সাজিয়েছেন মুল্ডার। তার সঙ্গী সেনুরান মুথুসামি অপরাজিত থেকেছেন ৭৫ বলে ৫ চার ও ২ ছক্কায় ৭০ রানে। সপ্তম উইকেটে অবিচ্ছিন্ন এই জুটি থেকে আসে ১৮৬ বলে ১৫০ রান।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
দক্ষিণ আফ্রিকা ১ম ইনিংস: (আগের দিন ৩০৭/২) ১৪৪.২ ওভারে ৫৭৫/৬ ডিক্লে. (ডি জর্জি ১৭৭, স্টাবস ১০৬, বেডিংহ্যাম ৫৯, রিকেলটন ১২, ভেরেইনা ০, মুল্ডার ১০৩*, মুথুসামি ৭০*; হাসান ২৩-১-৮৩-০, নাহিদ ২৪-২-৮৩-১, তাইজুল ৫২.২-৫-১৯৬-৫, মিরাজ ৩৯-২-১৭১-০, মুমিনুল ৪-০-১৫-০, জয় ২-০-১৪-০)।
বাংলাদেশ ১ম ইনিংস: ৯ ওভারে ৩৮/৪ (সাদমান ০, জয় ১০, জাকির ২, মুমিনুল ৬*, হাসান ৩, শান্ত ৪; রাবাদা ৩-০-৮-২, প্যাটারসন ৩-০-১৫-১, মহারাজ ২-১-৪-১, মার্করাম ১-০-২-০)।