গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর ঢাকার আশুলিয়ার বাইপাইল এলাকায় ছাত্র-জনতার বিজয় মিছিলে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ছোড়া গুলিতে আল আমীন নামে এক ব্যক্তি নিহত হন বলে দাবি করেন তার স্ত্রী কুলসুম বেগম। এই ঘটনায় কুলসুম বেগম থানায় শেখ হাসিনাসহ ১৩০ জনকে আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেছিলেন।
তবে, প্রায় তিন মাস পর গত সোমবার (১১ নভেম্বর) সিলেট মহানগরীর দক্ষিণ সুরমা থানায় এসে নিজেকে জীবিত দাবি করে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন স্ত্রীর মামলায় ‘নিহত’ উল্লেখ করা সেই আল আমীন।
মামলাটি মিথ্যা বলে দাবি করার পর সিলেট পুলিশ ঢাকার আশুলিয়ার সংশ্লিষ্ট থানার সাথে যোগাযোগ করে। এরপর ওই ব্যক্তিকে গতকাল উদ্ধার দেখিয়ে আশুলিয়া থানায় আনা হয়। আজ বুধবার তাকে জবানবন্দি প্রদান করতে আদালতে প্রেরণ করেছে আশুলিয়া থানা পুলিশ।
বিষয়টি নিশ্চিত করে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মো. রাকিবুল হোসেন দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, আল আমীনকে উদ্ধার দেখিয়ে আজ তাকে আদালতে পাঠানো হয়েছে। তিনি নিজে দাবি করছেন যে তার স্ত্রী তাকে মৃত দেখিয়ে মিথ্যা মামলাটি দায়ের করেছিলেন। আমরা মামলার বাদী, আল আমীনের স্ত্রী কুলসুমের সাথে যোগাযোগ করতে পারিনি, তবে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
তবে কুলসুম বেগমের দায়েরকৃত মামলায় নিহত আল আমিন, এবং থানায় হাজির হওয়া আল আমীন একই ব্যক্তি কিনা, তা এখনও নিশ্চিত করতে পারেনি পুলিশ।
এ বিষয়ে আশুলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবু বকর সিদ্দিক দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, ‘এটি আসলে নিশ্চিত করতে পারবে মামলার বাদী। কিন্তু আমরা এখনো বাদীর সাথে যোগাযোগ করতে পারিনি। যিনি নিজেকে আল আমীন দাবি করেছেন, আমাদের থানায় আনার পর আজ তাকে আদালতে পাঠানো হয়েছে জবানবন্দি প্রদানের জন্য। পরবর্তীতে পুরো বিষয়টি তদন্ত শেষে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে’।
এদিকে, আল আমীন বলেন, ‘৫ আগস্ট সে (স্ত্রী) আমার সঙ্গে সিলেটেই ছিল। এর তিন-চার দিন পর ঝগড়া করে মানিকগঞ্জে চলে যায়। এরপর আর তার সঙ্গে আমার কোনো যোগাযোগ হয়নি। তিন-চার দিন আগে শিপলু নামে এক ব্যক্তি ফোন করে জানান, আমি ৫ আগস্টের আন্দোলনে মারা গিয়েছি উল্লেখ করে সে (স্ত্রী) একটা মামলা করেছে। এটা জানার পর আমি দক্ষিণ সুরমা থানায় গিয়েছিলাম। একটা জিডি করি, ওসির সঙ্গে পরামর্শ করি। এরপর ওইখান থেকে তারা আমাকে আশুলিয়া থানায় পাঠিয়ে দেয়।’
গত ২৪ অক্টোবর কুলসুম বেগম (২১) তার স্বামীকে হত্যার অভিযোগ এনে ঢাকার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা দায়ের করেন। এতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ১৩০ জনকে আসামি করা হয়। পরবর্তীতে এটি ৮ নভেম্বর ঢাকার আশুলিয়া থানায় এজাহারভুক্ত হয়।
মামলায় কুলসুম বেগম তার স্থায়ী ঠিকানা হিসেবে মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার স্বল্প সিংজুরী বাংগালা গ্রাম দেখিয়েছেন এবং বর্তমান ঠিকানা আশুলিয়ার জামগড়া হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
মামলার এজাহারে তিনি দাবি করেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে ৫ আগস্ট সকালে তার স্বামী মো. আল আমিন মিয়া (৩৪) ছাত্র-জনতার আন্দোলনে অংশ নেন। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর বিকেল ৪টার দিকে আশুলিয়ার বাইপাইল এলাকায় বিজয় মিছিলে তিনি ছিলেন। তবে পরাজয় মেনে নিতে না পেরে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসী বাহিনী নির্বিচারে গুলি চালায়। এতে গুলিবিদ্ধ হয়ে তার স্বামী নিহত হন।
তিনি আরও উল্লেখ করেন, অনেক খোঁজাখুঁজি করার পরও তিনি স্বামীর সন্ধান পাননি। পরে আশুলিয়া নারী ও শিশু হাসপাতালের ৬ আগস্টের এক প্রতিবেদনের মাধ্যমে জানতে পারেন, ওই হাসপাতালে বিপুলসংখ্যক অজ্ঞাতনামা লাশ দাফন করা হয়েছে। এসব কাগজপত্র হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে রয়েছে। পরে তিনি হাসপাতালের কাগজপত্র, ছবি ও ভিডিও দেখে তার স্বামীর লাশ শনাক্ত করেন।
এই বিষয়ে মামলার বাদী কুলসুম বেগমের সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
বাদীর আইনজীবী ইকবাল হোসাইন দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি আসলে তেমন কিছু জানি না, আমি শুধু পাওয়ার দিয়েছি মামলা ফাইল করতে।’
এই আইনজীবী বিস্তারিত জানতে তার সিনিয়র আইনজীবী শামসুল আলমের সাথে কথা বলার অনুরোধ করেন।
যোগাযোগ করলে এডভোকেট শামসুল আলম দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, ‘যেকোনো বাদী যখন সংশ্লিষ্ট ডকুমেন্টস নিয়ে আমাদের কাছে আসেন, আমরা ডকুমেন্টস দেখে মামলা করে দেই। এই মামলার বাদী তার স্বামী মারা গেছে জানিয়ে সংশ্লিষ্ট হাসপাতাল থেকে লাশের গোসল থেকে শুরু করে দাফন পর্যন্ত ডকুমেন্টস সংগ্রহ করে আমাদের কাছে আসেন। তারপর আমরা আদালতে মামলার আবেদন করি। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে আশুলিয়া থানাকে মামলাটি নথিভুক্ত করার আদেশ দেন। এর বেশি কিছু আসলে আমাদের জানা নেই’।