ন্যাশনাল টি কোম্পানির ১২ চা বাগানের প্রায় ১০ হাজার শ্রমিক পরিবারের জীবিকার লড়াই কঠিন হয়ে পড়েছে। ৬ সপ্তাহের উপরে তলব রেশন বন্ধ থাকায় পরিবার নিয়ে মানবেতর জীবন কাটছে তাদের।
আর্থিক সংকটের কারণে ন্যাশনাল টি কোম্পানি শ্রমিকদের সাপ্তাহিক মজুরি ও রেশন দিতে পারছে না। এ পরিস্থিতিতে শ্রমিক পরিবারের মধ্যে চরম হতাশা ও অস্থিরতা চলছে।
মাধবপুর উপজেলার দুটিসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে এনটিসির ১২টি চা বাগান। চা উৎপাদনের ভরা মৌসুমে চা বাগান বন্ধ রয়েছে। এতে দেশের চা শিল্পের মারাত্মক প্রভাব পরেছে। চলতি মৌসুমে চায়ের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রায় অর্জিত না হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
সূত্র বলছে, ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর এনটিসির চেয়ারম্যান সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চাচা শেখ কবির হোসেনসহ ৭ পরিচালক দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়ান। ফলে আটকে যায় ব্যাংক লোন। এতে চরম অর্থ সংকটে পড়ে কোম্পানিটি। বন্ধ হয়ে যায় শ্রমিকদের তলব (মজুরি) ও রেশন। ৬ সপ্তাহ চলে গেলে ও কোন সুরাহা না হওয়ায় শ্রমিক পরিবারগুলোর জীবিকা নির্বাহ কঠিন হয়ে পড়েছে।
শ্রমিক নেতা খোকন পান তাতি জানান, প্রতি বুধবার এলেই চা বাগানে উৎসবের আমেজ বিরাজ করত। বিকেল হলেই চা বাগানের শ্রমিকরা লাইন ধরে তাদের সাপ্তাহিক রেশন ও তলব নিয়ে যেত। সেই টাকা দিয়ে বাগানের বাজারে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস পত্র ক্রয় করতেন। এতে করে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা তাদের দোকানের প্রচুর মালামাল বিক্রয় করতেন। এতে এলাকার ব্যবসা বাণিজ্য ছিল চাঙ্গা। কিন্তু ৩ মাস ধরে মাধবপুরে উপজেলার তেলিয়াপাড়া, জগদীশপুর চা বাগানসহ ১২টি বাগানে রেশন তলব বন্ধ রয়েছে। ন্যাশনাল টি কোম্পানি (এনটিসি) আর্থিক সংকট থাকায় তিন মাস ধরে শ্রমিকদের রেশন তলব (মজুরি) দিতে না পারায় এখন করুণ দশা চলছে প্রতিটি বাগানে। গত আগস্ট থেকে কোম্পানির তহবিলে অর্থের সংকট দেখা দেওয়ায় কর্তৃপক্ষ চা শ্রমিকের তলব রেশন সহ যাবতীয় ব্যয়ভার বহন করতে ব্যর্থ হয়। এক পর্যায়ে কর্তৃপক্ষ বাগান বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়।
গত ৩ মাস ধরে বাগানের সকল কর্মকাণ্ড বন্ধ হয়ে পড়েছে। রেশন তলব না পেয়ে শ্রমিক পরিবারে দেখা দিয়েছে তীব্র অভাব অনটন। এর প্রভাব পড়েছে স্থানীয় ব্যবসা বাণিজ্যে। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান, চা বাগানে প্রতি সপ্তাহে শ্রমিক-কর্মচারীদের কয়েক লাখ টাকা নগদে পরিশোধ করা হতো। ওই টাকা দিয়ে তারা নিত্য প্রয়োজনীয় সব মালামাল ক্রয় করতো। এতে স্থানীয়ভাবে অর্থনীতি চাকা সচল ছিল। এখন হাজারো শ্রমিক পরিবারের হাত শূন্য। অনেক শ্রমিক পরিবারে দিনের পর দিন চুলায় আগুন দিতে পারে না। কেউ কেউ ঘরের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র বিক্রি করে দিচ্ছে আহারের জন্য। বাগান নির্ভর ব্যবসায়ীরা হাত গুটিয়ে বসে আছে। বাগান চালু থাকলে সব পেশার মানুষের উপকার হত।
তেলিয়াপাড়া নোয়াহাটি বাজারের মাছ ব্যবসায়ী সুবোধ বিশ্বাস বলেন, আগে প্রতিদিন সকালে বাগানের অনেক মানুষ বাজারে কেনাবেচা করতেন। এখন তাদের স্রোত কমে গেছে।
জগদীশপুর চা বাগানের শ্রমিক মিঠুন ঋষি বলেন, বাগান বন্ধ হয়ে পড়ায় শ্রমিক পরিবারগুলো মানবেতর জীবন যাপন করছে। চা বাগানের শ্রমিক নির্ভর স্থানীয় ব্যবসায়ীদের বেচা কেনায় স্থবিরতা দেখা দিয়ে বিপদে পড়েছেন। সরকার জরুরিভাবে এ সমস্যা সমাধান না করলে কয়েক হাজার মানুষের জীবন আরও কঠিন সমস্যার মধ্যে পড়বে।
এনটিসি মহাব্যবস্থাপক এমদাদুল হক বলেন, এনটিসি এর আগে এমন সংকটে পড়েনি। সংকট কাটিয়ে উঠতে কর্তৃপক্ষ আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছে। ব্যাংক লোন হয়ে গেলেই সংকট কেটে যাবে। বাগান চালু থাকলে এর অর্থনৈতিক গতি প্রবাহ চলতে থাকে। এখন বাগান বাগান বন্ধ থাকায় শ্রমিক কর্মচারী,ব্যবসায়ীসহ সবাইকে বেগ পেতে হচ্ছে।