উচ্চ আদালতের নির্দেশে ২০২৩ সালের জুলাই মাসে শুরু হয় সুনামগঞ্জ পৌর শহরের পাঁচ খাল উদ্ধারের মহাযজ্ঞ। ২৪ বছর পর বড়পাড়া, তেঘরিয়া, নলুয়া, বলাই ও কামারখাল খালের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে সফল অভিযান চালায় জেলা প্রশাসন ও পৌরসভা।
পাঁচটি খালের উপরে থাকা প্রায় সবগুলো অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করতে সফল হয় প্রশাসন। তবে অভিযানের এক বছর পেরিয়ে গেলেও অদৃশ্য কারণে উচ্ছেদ করা যায় নি বড়পাড়া খালের উপর নির্মিত সাবেক এক ব্যাংক কর্মকর্তার এক তলা বিশিষ্ট পাকা ভবন। শহরের সাত নম্বর ওয়ার্ডের পশ্চিম তেঘরিয়ার সাবেক ব্যাংক ব্যবস্থাপক এ জেড এম দীন ইসলামের ভবনের সামনের পুরো অংশ খালের জায়গায় নির্মাণ হয়। এখনো খালের উপর সগৌরবে দাঁড়িয়ে থাকা শহরের একমাত্র ভবন এটি। বিত্তবান প্রভাবশালী হওয়ায় এই ভবনটি উচ্ছেদ হয় নি অভিযোগ স্থানীয়দের।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক স্থানীয় বাসিন্দা জানান, তাদের এক বোন জামাই সরকারি অফিসে বড় পদের চাকরিজীবী। উচ্ছেদের সময় তাদের নিয়ে বাসায় দাওয়াত দিয়ে ভুরিভোজ করা হয়েছে। একারণে হয়তো এই ভবনে আর কেউ হাত দেয় নি।
জানা যায়, বড়পাড়া খালটি সুরমা নদী থেকে শুরু হয়ে শেষ হয়েছে বিজিবি ক্যাম্পের পাশ দিয়ে গিয়ে ঝাওয়ার হাওরে। মাঝে হাছনরাজার উত্তরাধিকারি সূত্রে পাওয়া বাগানবাড়ির নিজস্ব রেকর্ডিয় জায়গা খালকে দ্বিখন্ডিত করেছে। সুরমা নদী থেকে বাগানবাড়ি পর্যন্ত খালের এক অংশ। মাস্টার বাড়ি থেকে ঝাওয়ার হাওর পর্যন্ত আরেক অংশ। ২০২৩ সালের ৩১ আগস্টে সুনামগঞ্জ সদর ভূমি অফিসের তৎকালীন সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. এমদাদুল হক শরীফ খালের জায়গা দখল করে বানানো দীন ইসলামের দুইটি টিনশেড বসত ঘর উচ্ছেদ করেন। টিনশেডের পাশে থাকা বড় পাকা ভবনটিতে খালের জায়গা চিহ্নিত করে লাল রঙ দিয়ে চিহ্নিত করা হয়। এসময় দীন ইসলাম নিজে উচ্ছেদ করবেন বলে জানালে ভবনটি উচ্ছেদ না করেই চলে আসে প্রশাসনের লোকজন।
পরবর্তীতে ভবন মালিক দীন ইসলাম ভবনের সামনের পুরো অংশ না ভেঙে এক কোনার উপরের ছাদ ও নিচের ভিত্তি রেখে শুধু ৪—৫ ফুট ইট খুলে নেন। খালের জায়গায় থেকে যায় ভবনের সেফটিক ট্যাংক, বারান্দা, ব্যালকনি। এরপর থেকে প্রশাসনিক আর কোন তৎপরতা না থাকায় উচ্ছেদের পরিবর্তে ফের খাল দখলে নামেন দীন ইসলাম। উচ্ছেদ হওয়া টিনশেডের ঘর আবার পুনঃস্থাপন করেন।
এ বিষয়ে ভবন মালিক দীন ইসলাম বলেন, সরকারের জায়গা সরকার মাপজোক করে পেলে নেবে। তাদের যখন প্রয়োজন তারা নিয়ে যাবে, তারা না নিলে কি করবো। উচ্ছেদ হওয়া জায়গায় অস্থায়ী বেড়া দিয়েছি, দখল করি নি।
এ বিষয় সদর উপজেলার বর্তমান সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. ইসমাইল রহমান বলেন, আমি শুনেছি উচ্ছেদ অভিযান হয়েছিল। উচ্ছেদ অভিযান করতে হলে জেলা প্রশাসন থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়, ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ করা হয়। সেই ম্যাজিস্ট্রেট উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করেন। আমি আসার পরে উর্ধ্বতন কতৃর্পক্ষ থেকে এরকম উচ্ছেদের কোন আদেশ পাই নি। এরপরও আমি এই বিষয়টি নিয়ে খোঁজ নিবো।
পৌর প্রশাসক সমর কুমার পাল বললেন, আমরা শুধু বড়পাড়া খাল নয়, সকল খালের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করতে চাই। কিন্তু উচ্ছেদ করতে বিভিন্ন যন্ত্রপাতিসহ আনুষাঙ্গিক যে খরচ হয়, সেই অর্থের উৎসটা পাচ্ছি না। পরিবেশ ও পানি সম্পদ উপদেষ্টার উপস্থিতিতে সভায়ও জানিয়েছি বিষয়টি। আমাদের পক্ষ থেকে লিখিতও দেয়া হয়েছে। অর্থ পেলেই আমরা কাজটা বাস্তবায়ন করতে চাই।