বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সিলেট সেক্টরের অভিযানে গত ২৩ জুন থেকে ২৪ জুলাই পর্যন্ত এক মাসে সিলেটের সীমান্ত এলাকার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে ৪৬ কোটি ৭৮ লাখ টাকার বিভিন্ন প্রকার চোরাচালান পণ্যসামগ্রী জব্দ করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২৪ জুলাই) এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান সিলেট ব্যাটালিয়ন ৪৮ বিজিবির উপ-অধিনায়ক মেজর নুরুল হুদা।
দেশের সীমান্ত সুরক্ষা ও চোরাচালান প্রতিরোধে বিজিবি নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করে জাতীয় নিরাপত্তা ও অর্থনীতিকে দৃঢ় ভিত্তি দিচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায়, সম্প্রতি সিলেট ব্যাটালিয়ন ৪৮ বিজিবি একাধিক সফল অভিযান পরিচালনা করে বিপুল পরিমাণ চোরাচালানি পণ্য জব্দ করেছে, যা সীমান্তরক্ষায় বিজিবির কঠোর অবস্থান ও পেশাদারিত্বের প্রমাণ।
২৩ ও ২৪ জুলাই তারিখে সিলেট ও সুনামগঞ্জ জেলার সীমান্তবর্তী এলাকায় পরিচালিত অভিযানে ৫ কোটি ১২ লাখ ৪১ হাজার ২২০ টাকার চোরাচালানি মালামাল জব্দ করা হয়। অভিযানে অংশ নেয় সিলেট ব্যাটালিয়নের অধীনস্থ বাংলাবাজার, সংগ্রাম, উৎমা ও মিনাটিলা বিওপি (সীমান্ত চৌকি)। জব্দকৃত মালামালের মধ্যে ছিল ভারতীয় সানগ্লাস, মাইফেয়ার ও ক্লোপ জি ক্রিম, গরু, সুপারি, টমেটো ও চিনি।
গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে পরিচালিত এসব অভিযানে বিজিবির চৌকস সদস্যরা তাৎক্ষণিক ও সফল প্রতিক্রিয়া দেখিয়ে বিপুল পরিমাণ মালামাল আটক করতে সক্ষম হন।
এই সফলতা উপলক্ষে বৃহস্পতিবার (২৪ জুলাই) সিলেটের আখালিয়াস্থ ৪৮ বিজিবি ব্যাটালিয়ন সদর দপ্তরে এক প্রেস ব্রিফিংয়ের আয়োজন করা হয়। সেখানে সিলেট ব্যাটালিয়নের উপ-অধিনায়ক মেজর নুরুল হুদা সাম্প্রতিক অভিযানের সার্বিক চিত্র ও বিজিবির কৌশলগত অবস্থান তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, “বিজিবির প্রতিটি সদস্য দেশপ্রেম, নিষ্ঠা ও পেশাগত দক্ষতার সমন্বয়ে চোরাচালান দমনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। সীমান্তে বিজিবির উপস্থিতি এখন চোরাচালানকারীদের জন্য বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। রাষ্ট্রীয় অর্থনীতিকে সুরক্ষা দেওয়া, অবৈধ ব্যবসার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো এবং শান্তিপূর্ণ সীমান্ত গড়ে তোলার লক্ষ্যে ভবিষ্যতেও আরও জোরালো পদক্ষেপ নেওয়া হবে।”
তিনি আরও জানান, “গত ৪৮ ঘণ্টায় গোয়াইনঘাট ও জৈন্তাপুর সীমান্ত এলাকায় পরিচালিত টাস্কফোর্স অভিযানে প্রায় ৫ কোটি ১২ লাখ ৪১ হাজার ২২০ টাকার অবৈধ পণ্য জব্দ করা হয়েছে। এই অভিযানে সেনাবাহিনীর ২৭ বীর ইউনিটের একটি দল বিজিবিকে সহযোগিতা করেছে।”
প্রেস ব্রিফিংয়ে আরও জানানো হয়, গত এক মাসে সিলেট সেক্টরের অধীনে তিনটি ব্যাটালিয়নের মাধ্যমে প্রায় ৪৬ কোটি ৭৮ লাখ টাকার অবৈধ চোরাচালানি পণ্য জব্দ করা হয়েছে। এর মধ্যে সিলেট ব্যাটালিয়ন জব্দ করেছে প্রায় ৩১ কোটি টাকার, সুনামগঞ্জ ব্যাটালিয়ন ১০ কোটি টাকার এবং জকিগঞ্জ ব্যাটালিয়ন ৫ কোটি টাকার চোরাচালান পণ্য।
সেক্টর ও ব্যাটালিয়ন পর্যায়ের সুসংগঠিত নেতৃত্ব, প্রযুক্তিনির্ভর নজরদারি এবং চৌকস সদস্যদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় চোরাচালান কার্যক্রম এখন অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। সীমান্ত এলাকাকে নিরাপদ ও স্থিতিশীল রাখতে বিজিবির ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
জব্দকৃত মালামালের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
সীমান্ত রক্ষায় বিজিবির নিরলস পরিশ্রম ও ধারাবাহিক সাফল্য শুধু বাহিনীর নয়, বরং জাতির গর্ব। দায়িত্ববোধ, দেশপ্রেম ও মানবিকতা—এই তিনটি স্তম্ভে দাঁড়িয়ে থাকা বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ ভবিষ্যতেও দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় তাদের অঙ্গীকার অটুট রাখবে, এমনটাই প্রত্যাশা।





