সংঘাত ও নাশকতার কারণে টানা ১০ দিন মোবাইল ইন্টারনেট বন্ধ ও কারফিউতে বিপাকে পড়েছেন রাইড শেয়ারিং মোটরসাইকেল চালকেরা। তাদের আয়ে পড়েছে বড় ধাক্কা। এ অবস্থায় রোজগার কমেছে অর্ধেকেরও বেশি। পরিস্থিতি পুরো স্বাভাবিক না হলে সহজ হবে না আয়ের পথ, বলছেন তারা। অনেকে চুক্তিতেও এ সময় ভাড়া না পেয়ে অলস সময় কাটিয়েছেন বলে জানান।
মোটরসাইকেলে যাত্রী বহন করে বাড়তি আয় করেন শরিফ কাজী। শুরু থেকেই অ্যাপে যাত্রী আনা-নেওয়া করেন তিনি। এতে যাত্রাবাড়ীর বাসিন্দা এই যুবকের বেশ ভালোই চলছিল দিনকাল। কিন্তু সম্প্রতি কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে রাজধানীসহ সারা দেশে ইন্টারনেট বন্ধ থাকায় তার আয়-রোজগারে বড় ধাক্কা লেগেছে। পরে টিকে থাকতে বাধ্য হয়ে অন্যদের মতো খ্যাপে (চুক্তিতে যাত্রী নেওয়া) যাত্রী তুলতে শুরু করেন তিনি।
শামীম আহমেদ এমনই একজন। বেসরকারি চাকরি ছেড়ে দিয়ে রাইড শেয়ার করে ভালোই কাটছিল দিন। সম্প্রতি ১০ দিন মোবাইল ইন্টারনেট বন্ধ থাকায় বিপাকে পড়েন তিনি। কোটা আন্দোলন ঘিরে দেশব্যাপী সংঘাত ও নাশকতার পর বন্ধ ছিল মোবাইল ইন্টারনেট। এতে ভোগান্তিতে পড়েন শামীমের মতো অ্যাপ-নির্ভর রাইডারেরা। আরেক রাইড শেয়ারার জানান, কারফিউয়ের কারণে অনেক রাস্তা বন্ধ। এ কারণে বিভিন্ন রাস্তায় যানজটের সৃষ্টি হয়। ফলে ভাড়াও তেমন পাওয়া যায় না। এক রাইড শেয়ারার বলছেন, আগে দিন আয় থাকত ১ হাজার বা তার বেশি টাকা। বর্তমানে তা কমে দাঁড়িয়েছে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা। বাধ্য হয়ে অনেক কম ভাড়ায় মোটরসাইকেল চালাতে হচ্ছে তাদের। তারা বলছেন, পরিস্থিতি ভালো হলে আশা করা যায় আগের মতো অবস্থা ফিরে আসবে।
পাঠাওয়ের একজন চালক ইন্টারনেট বন্ধ থাকার সময়, কারফিউর শুরুর দিকের আয়ের চিত্র তুলে ধরে বলেন, ‘ছাত্রদের সঙ্গে ঝামেলা শুরুর পর এক সপ্তাহ বের হতে পারিনি। ফাঁকা রাস্তায় যাত্রীও নেই। আবার অনলাইন বন্ধ থাকায় খ্যাপের চালক বেড়ে গেছে। কারফিউর শুরু থেকে তিন দিনে মাত্র ১ হাজার ৭০০ টাকার ট্রিপ দিয়েছি। অন্য সময় বেলা ১২টা থেকে সন্ধ্যার মধ্যে প্রতিদিন কম হলেও ১ হাজার ৫০০ টাকা পকেটে ঢুকত।
যানজটের নগরীতে দ্রুত ও ঝামেলাহীন যাতায়াতে অনেকের পছন্দ মোটরসাইকেল রাইড শেয়ারিং। অনেকেই একে বেছে নিয়েছেন পেশা হিসেবে। অবশ্য মাঠের রাইডাররা যখন আয়ের কষ্টের কথা বলছেন, তখন রাইড শেয়ারিং প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে বলা হচ্ছে, ইন্টারনেট না থাকায় তাদের আয় তলানিতে নেমেছিল। ধীরে ধীরে এখন স্বাভাবিকের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করছেন।
মোবাইল ফোন অ্যাপস-ভিত্তিক গাড়ি শেয়ার নেটওয়ার্ক ‘উবার’ ও ‘পাঠাও’র কার্যক্রম দেশে শুরু হয় ২০১৬ সালে। এরপর থেকে সড়কে যানজট এড়িয়ে দ্রুত ও সহজে গন্তব্যে পৌঁছাতে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে এ রাইড শেয়ারিং। কেউ পুরোপুরি পেশা হিসেবে নিয়েছেন। কেউ আবার বাড়তি আয়ের মাধ্যম হিসেবে চাকরি কিংবা অন্য কাজের ফাঁকে রাইড শেয়ার করছেন। যাত্রী কল্যাণ সমিতির দাবি অনুযায়ী, যানজটের নগরী ঢাকায় ৫ লাখের মতো এবং সারা দেশে আরো ৮-১০ লাখ মোটরযান শেয়ারে চলে। ঢাকায় ব্যক্তিগত অনেক গাড়িও শেয়ারে চলে। তবে নিবন্ধন করে উবার ও পাঠাও অ্যাপসে চলে ২৮ হাজারের মতো মোটরযান-গাড়ি। শুরুর দিকে উবার, পাঠাও ছাড়াও দেশে স্যাম, আমার রাইড, মুভ, বাহন, চলো অ্যাপে, ট্যাক্সিওয়ালা, ওই খালি, ইজিয়ার, লেটস গো ইত্যাদি নামে বিভিন্ন কোম্পানি অ্যাপভিত্তিক পরিবহন সেবার কাজ শুরু করে। তবে এগুলোর মধ্যে অনেকের এখন কার্যক্রম নেই।