জামালগঞ্জ উপজেলার ভীমখালী ইউনিয়নের গোলামীপুর গ্রামের বাসিন্দা শহীদ মো. সোহাগ মিয়া ও আহত মো. শুভ মিয়া’র বাড়িতে গিয়ে খোঁজ খবর নিয়েছেন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মাঈন উদ্দিন আলমগীর। সোমবার উপজেলা স্বাস্থ্য পরিদর্শক মো. হাবিবুর রহমান, স্টাফ নার্স সাজিদা আক্তার এসময় উপস্থিত ছিলেন।
এসময় মো. শুভ মিয়ার মা রোকেয়া বেগম বলেন, দেশটা তো মুক্ত হলো কিন্তু আমাদের ভাগ্যের পরিবর্তন হবে কি? সরকারের পক্ষ থেকে জেলা প্রশাসক মহোদয় ১ লাখ টাকা এবং বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলাম ২ লাখ টাকার আর্থিক সহায়তা দিয়েছেন। তিনি বলেন, টাকা না দিয়ে আমার আহত ছেলের চিকিৎসা ও তাকে প্রশিক্ষণ দিয়ে কোন কারখানায় চাকরির ব্যবস্থা করে দিলে আমাদের পরিবারটা বেঁচে যেতো।
আহত মো. শুভ মিয়া বলেন, পরিবার নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি, দুই মাস যাবত বেকার। আমার বড় ভাই বিদেশ যাওয়ার জন্য ধার দেনা করে দালালের কাছে সাড়ে পাঁচ লক্ষ টাকা তুলে দেন। বিদেশ যেতে না পেরে রোজগারের আশায় পাড়ি জমান ঢাকায়। সেখানে একটি গার্মেন্সে ১ বছর ধরে চাকরি করেও পরিবারের খরচ জোগাতে না পেরে একে একে ৩ ভাই ঢাকায় চাকরির সন্ধানে যাই। সেখানে বড় ভাই সোহাগ গার্মেন্টেসে চাকরী করে আর আমরা ২ ভাই নির্মাণ শ্রমিকের কাজ করেছি। তিনি বলেন, স্বৈরাচারী সরকারের পতনের পর বিজয় মিছিলে আমার বড় ভাই সোহাগ গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। বড় ভাইয়ের একটা ছোট বাচ্চা ও স্ত্রী রয়েছেন। পরিবারের সকলের ভরন পোষন ও ঋণে জর্জারিত হয়ে এখন দিশেহারা আমাদের পরিবার। সরকার যদি কোথাও কাজ করার ব্যবস্থা করতো তাহলে বেঁচে যেতাম, না হলে পরিবার নিয়ে রাস্তায় দাঁড়ানো ছাড়া উপায় নেই।
তিনি আরও বলেন, পুলিশ গুলি করলে আমার ডান পায়ে লাগে। তখন ঢাকা এম জেড হাসপাতালে নিয়ে যায় সাথীরা। সেখানে সামান্য চিকিৎসা করে বড় ভাই শহীদ সোহাগ ভাইয়ের লাশ নিয়ে বাড়ি চলে আসি। চোখের জল মুছতে মুছতে তিনি বলেন, ভাবছিলাম ৩ ভাই চাকুরি করে সংসারের হাল ধরব। ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে বড় ভাইয়ের লাশ এবং আমি পায়ে গুলি বিদ্ধ হয়ে বড়িতে আসতে হলো।
মো. শুভ মিয়া বাবা আব্দুল কালাম বলেন, আমার বড় ছেলেসহ ৩ জন পরিবারের ভরন পোষনের জন্য ঢাকায় গিয়েছিল। একজন গার্মেন্টেসে চাকুরী করত অন্য ২ জন রাজমিস্ত্রি কাজ করতো। বড় ছেলে মারা যাওয়ায় এবং ছোট ছেলে আহত হওয়ায় পরিবার নিয়ে চলতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। কোন রকমে ধার দেনা করে সংসার চালাচ্ছি। আল্লাহ যেন আমার মতো আর কোন পরিবারকে এমন অবস্থায় না ফেলে। গুলিবিদ্ধ ছেলেটা রাতে হঠাৎ পায়ের ব্যাথায় ঘুম থেকে চিৎকার দিয়ে উঠে।
জামালগঞ্জ উপজেলা হাসপাতালের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মাঈন উদ্দিন আলমগীর জানান, গুলিবিদ্ধ মো. শুভ মিয়ার চিকিৎসার ব্যবস্থা সুনামগঞ্জ সিভিল সার্জন কার্যালয় ও জামালগঞ্জ হাসপাতালের যৌথ উদ্যোগে করা হবে। পাশাপাশি পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের যে কোন প্রয়োজনে চিকিৎসা দিতে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা করা হবে। তিনি নিহত শহীদ পরিবারের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দেন।