ড্রেজার মেশিন ব্যবহার করলে ক্রিমিনাল মামলা হবে বিভাগীয় কমিশনার

লিজে বলা আছে ড্রেজার মেশিন ব্যবহার করা যাবে না। যারা ড্রেজার মেশিন ব্যবহার করবে, তাদের শুধু লিজ বাতিল নয়, তাদের বিরুদ্ধে ক্রিমিনাল ওপেন্সে মামলা হবে। জাতীয় সম্পদ যারা চুরি করে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। ড্রেজার মেশিন জব্দ করে ধ্বংস করতে হবে। সনাতন পদ্ধতিতে বালু তোলার বিষয়েও আমরা চিন্তা করবো।
সোমবার বেলা সাড়ে ১১টায় শুরু হওয়া ধোপাজান নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধে অংশীজনের উপস্থিতিতে মতবিনিময় সভায় এসব কথা বলেন সিলেট বিভাগীয় কশিনার আবু আহমদ সিদ্দীকী (এনডিসি)।
জেলা শিল্পকলা একাডেমির হাছন রাজা মিলনায়তনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি আরও বলেন, বালু-পাথর, সৌন্দর্য, প্রকৃতি এসব জাতীয় সম্পদ। জাতীয় সম্পদকে যারা লুন্ঠন করে, তাদের বিরুদ্ধে আমাদের একসাথে লড়তে হবে। এরা কিন্তু শক্তিশালী এবং ভয়ংকর হিং¯্র। ফেরোসাস ভূমিখেকো, পাহাড়খেকো, বালুখকোদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলন করতে না পারলে তাদের দমন করা যাবে না। এরা লিজ নেয় এক জায়গায়, পরবর্তিতে আশেপাশের জায়গা দখল করে অবৈধভাবে বালু-পাথর উত্তোলন করে। এদের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। সবাই সোচ্চার হলে এটা বন্ধ হবে।
শ্রমিকরা নয়, যারা ড্রেজার মেশিন লাগায় তাদের ধরতে হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, শ্রমিকদের উপর মামলা দিয়ে কোন ফায়দা নাই। তিনি বলেন, সমাজে একজন লোক হঠাৎ করে কোটি টাকার মালিক হলে সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়। আমরা এগুলো বন্ধ করতে চাই। আপনাদের সহযোগিতায় ক্রিমিনালদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে চাই।
তিনি বলেন, আমাদের জানতে হবে এখানে বালু আছে কি না। কারণ এখান থেকে সরকার টাকা পাচ্ছে। যদি লিজ না দেই, তাহলে সরকার জিজ্ঞেস করতে পারে তুমি লিজ দিলে না কেন। যদি বালু না থাকে, তাহলে আমরা কেন লিজ দেব। যেখানে ১০০ ফিট গভীর হয়ে গেছে, সেখানে তো আপনি কিছুই করতে পারবেন না। যেখানে যেখানে বালু মহাল সৃজন হয়েছে এবং সেগুলোর অজুহাতে আশপাশ ধ্বংস করা হয়েছে, সেগুলো পরীক্ষা করে দেখতে হবে। বেলা, সাংবাদিক সহ যারা আমাদের বিষয়টি জানিয়েছেন, তাদের আমাদের স্যালুট। যারা দোষি তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে আমরা দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ।
তিনি বলেন, বালু না থাকলে আমরা বালু মহাল রাখবো না। আপনারা সরকারি ভাবে বালু উত্তোলনের কথা বলেছেন, এটা একটা কঠিন কাজ। এছাড়াও নদীর নাব্যতা রক্ষা করার কথা বলেছেন, আমাদের শ্রমিকদের জীবিকার কথা বলেছেন, সকলের কথা আমাদের চিন্তা করতে হবে। কারণ সকল দরজা বন্ধ করে দিলে হবে না। আপনাদের এলাকার মানুষকেও সচেতন হতে হবে। আমরাও অবস্থার উন্নতি হয়েছে কি না সে বিষয়ে পরবর্তিতে আবারও সভা করবো।
বিজিবি’র অধিনায়ক লে. কর্ণেল একে এম জাকারিয়া কাদির বলেন, যাদুকাটা নদী এবং ধোপাজান নদীতে অবৈধভাবে ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু- পাথর উত্তোলন করার কারণে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। গত ২২ তারিখ আ্মরা সুনামগঞ্জে সবচেয়ে বড় একটা অভিযান পরিচালনা করেছি। প্রায় ১৩ কোটি টাকার স্টিলবডি নৌকা, ড্রেজার মেশিনসহ বালু জব্দ করি। এর আগে কখনও এত বড় অভিযান হয় নি। বিজিবিকে ইনফরমেশন দিয়ে আপনারা সহায়তা করবেন। আমরা আপনাদের ইনফরমেশন যাচাই-বাছাই করে সিভিল প্রশাসন সাথে নিয়ে এই ধরনের অভিযান অব্যাহত রাখবো।
পুলিশ সুপার আ. ফ. ম. আনোয়ার হোসেন খান বলেন, আমি দেড়মাস হয় সুনামগঞ্জে যোগদান করেছি। আমি যখনই অভিযোগ পেয়েছি, তখনই অভিযান পরিচালনা করেছি। যখনই শুনেছি পুলিশ প্রশাসনের কিছু অসাধু কর্মকর্তা যারা জড়িত রয়েছে, তদন্ত কমিটি করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছি। আমরা ইতোমধ্যেই দুইজন ডিবির অফিসার চারজন অফিসারকে বদলি করেছি। ডিবির ইন্সপেক্টরকে বদলি করা হয়েছে। থানার একজনকে বরখাস্ত করেছি। তাকে এই জেলা থেকে সরিয়েছি। পাশাপাশি আরও তিনজন কর্মকর্তাকে এখান থেকে বদলি করেছি এবং তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। আমরা বিজিবি এবং জেলা প্রশাসন সহ সবাই মিলে অভিযান করব। বালুখেকো বাবুল মিয়াকে গ্রেফতার করেছি। অল্প সময়ের মধ্যে সবকিছু করা সম্ভব হবে না। আমাদের অভিযান অব্যাহত থাকবে। আপনাদের সহযোগিতা নিয়ে আসামীদের প্রত্যেককে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় এনে শাস্তি নিশ্চিত করতে সহযোগিতা চাই।
জেলা প্রশাসক ড. মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়া বলেন, আমাদের দায়িত্ব ও আন্তরিকতায় কোন ঘাটতি নাই। অবৈধভাবে বালু উত্তোলনকারীদের আমরা বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেছি। যাদুকাটা এবং ধোপাজান নদীতে আমার কোন সংশ্রব  নেই। গত ২২ তারিখে স্মরণকালের সবচেয়ে বড় অভিযান পরিচালনা করেছি আমরা।  আমরা এই বিষয়ে সকলের সহহযোগিতা চাই। এজন্যই আজকের এই আয়োজন।