দোয়ারাবাজার টেকনিক্যাল স্কুল এণ্ড কলেজ। মন্ত্রীর ভাগ্নে পরিচয়ে অফিসে দাপুটে ঠিকাদার ছিলেন
তিনি নিজেকে মন্ত্রীর ভাগ্নে পরিচয় দিতেন। অফিসের পিওন থেকে সবাই তাকে মন্ত্রীর ভাগ্নে হিসেবেই চিনতো। একারণে বেশি চাপও দিতে পারতো না। অফিসের কাউকে আমলেও নিতেন না তিনি। কাজ শেষ করার তাগাদা দিলে উল্টো বড় বসকে দিয়ে ধমক দেওয়াতেন, এজন্যই ৫৪০ দিনের কাজ ২০০০ দিনেও শেষ হয় নি।’
দোয়ারাবাজার টেকনিক্যাল স্কুল এণ্ড কলেজ (টিএসসি) এর নির্মাণ কাজ কেন বিলম্বিত হচ্ছে, জানতে চাইলে শিক্ষা প্রকৌশলী অধিদপ্তরের একজন সাবেক প্রকৌশলী এমন মন্তব্য করলেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দোয়ারাবাজার উপজেলা সদরের পাশে দোয়ারা—ভোগলাবাজার সড়কে (সাইটিং ঘাটে) পাঁচ তলার একটি একাডেমিক ভবন, চার তলার অফিস ভবন এবং চারকক্ষ বিশিষ্ট সার্ভিস স্টেশনসহ আরও নানা স্থাপনা নির্মাণের কাজ যৌথভাবে (জয়েন্ট বেঞ্চারে) পায় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ময়মনসিংহের সেহড়া চামড়া গুদাম এলাকার মেসার্স ভাওয়াল কন্সট্রাকশন— ওয়েস্টার্ণ ইঞ্জিনিয়ারিং (প্রা. লি.) এবং ঢাকার গুলশান নিকেতন এলাকার এম. এম. বিল্ডার্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং। এই দুইটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে চুক্তিতে লাইসেন্স এনে কাজ করেন ঠিকাদার মাহতাবুল হাসান সমুজ।
প্রায় ১৬ কোটি টাকা ব্যয়ে দুই একর জমির উপর এই প্রতিষ্ঠানের ক্যাম্পাস নির্মাণের কাজ শুরু হয় ২০১৮ সালের ২৮ আগস্ট। রোববার পর্যন্ত (৩ রা নভেম্বর’২০২৪) এই ভবনের কাজ শেষ হয় নি।
কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের একজন কর্মকর্তা জানান, দেশে ১০০ টি টেকনিক্যাল স্কুল এণ্ড কলেজের ক্যাম্পাস নির্মাণের কাজ একসঙ্গে শুরু হয়। এরমধ্যে ৯১ টি ক্যাম্পাস নির্মাণের কাজ শেষ। নয়া ক্য্যাম্পাসে চলছে এসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষা কার্যক্রম। অথচ দোয়ারাবাজার টেকনিক্যাল স্কুল এণ্ড কলেজ নতুন ভবনে পাঠদান করতে পারছে না।
দোয়ারাবাজার টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজের একাডেমিক কার্যক্রম গেল জানুয়ারি মাস থেকে শুরু হয়। প্রথম বছর এই প্রতিষ্ঠানে ৬ষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত ৫৬০ জন শিক্ষার্থী ভর্তির অনুমোদন থাকলেও শ্রেণিকক্ষ সংকট থাকায় শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়েছে ১৮৬ জন।
স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলাম বললেন, আমাদের উপজেলা অপেক্ষাকৃত অবহেলিত। এখানে টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজ হচ্ছে শুনে আমরা খুশি হয়েছিলাম। কিন্তু দেড় বছরের কাজ সাত বছরেও শেষ না হওয়ায় হতাশ হয়েছেন দোয়ারাবাসী। শুনেছি ঠিকাদার আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা ছিল। একারণে ইচ্ছেমত কাজ করেছে তারা।
ঠিকাদার মাহতাবুল হাসান সমুজ বললেন, দোয়ারাবাজার টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজের ক্যাস্পাস নির্মাণের কাজের শুরুতেই জমি অধিগ্রহণ নিয়ে জটিলতা ছিল। ঠিকাদারকেও মামলায় বিবাদী করা হয়েছে। এই কাগজ আমার কাছে আছে। পরে মাটি ভরাট ও বাউন্ডারি দেয়াল নির্মাণের কাজও আমাকে দিয়ে করানো হয়। প্রাকৃতিক দুর্যোগও ছিল। সব মিলিয়ে এই কাজটিতে কোটি কোটি টাকা লোকসানে পড়েছি আমি। তবুও ডিসেম্বরের মধ্যে কাজ শেষ করার চেষ্টা করছি। কোথাও আমি কোনভাবেই দাপট দেখাইনি।
শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. কামরুজ্জামান বললেন, আমি যোগদান করার আগে তিনজন নির্বাহী প্রকৌশলী এই কাজ শুরু হবার পর দায়িত্ব পালন করেছেন। আমি এসে দ্রুত কাজ শেষ করার জন্য দুই দফায় চিঠি দিয়েছি। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে কাজ শেষ না করলে ব্যবস্থা নেব। প্রয়োজনে কার্যাদেশ বাতিল করে জামানত বাজেয়াপ্ত করা হবে। ঠিকাদার কাজ শেষ না করায় শিক্ষার্থীদের পাঠদানে বিঘ্ন ঘটছে।