সুনামগঞ্জের সবচাইতে বৃহৎ ও ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপীঠ সরকারি জুবিলী উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রাথমিক শাখায় শিক্ষার্থী কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন স্কুলের শিক্ষকরা। আগামী বছরে এই বিদ্যালয়ে তৃতীয় শ্রেণির প্রভাতি দুই শাখার স্থলে এক এবং দিবা শাখায়ও এক শাখা চালু করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। স্কুল কতৃর্পক্ষের এমন সিদ্ধান্তে প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে শহরের শিক্ষার্থী অভিভাবক ও সুশীলজনদের মধ্যে। তারা বলেছেন, ‘ঐতিহ্যবাহী এই বিদ্যাপীঠ সংকুচিত নয়, সম্প্রসারণ চাই আমরা, ছাত্র অনুপাতে শিক্ষকও চাই।’
সুনামগঞ্জ সরকারি জুবিলী উচ্চ বিদ্যালয়ের ২০২৫ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি বিজ্ঞপ্তি মঙ্গলবার প্রকাশিত হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে বিদ্যালয়ের ৩য় শ্রেণিতে প্রভাতি শাখায় ৫৩, দিবা শাখায় ৫৩ শিক্ষার্থীর পদশূন্য উল্লেখ করা হয়েছে। অথচ ২০২৪ ইংরেজির ভর্তি বিজ্ঞপ্তিতেও প্রভাতি শাখায় ১২০ ও দিবা শাখায় ১২০ জন শিক্ষার্থীর পদশূন্য উল্লেখ করে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়েছিল।
হঠাৎ করে সরকারি জুবিলীর শুরুর ক্লাসে (৩য় শ্রেণিতে) ১৩৪ জন শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ কমিয়ে দেওয়ায় প্রতিক্রিয়া হয়েছে শহরের শিক্ষার্থী অভিভাবকদের মধ্যে। অনেক অভিভাবক এই প্রতিবেদকের হোয়াটসঅ্যাপে নতুন ভর্তি বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়ে, এই বিষয়টি পুন:বিবেচনা করার জন্য কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ জানিয়েছেন।
শহরের পুরাতন বাসস্টেশনের শিক্ষার্থী অভিভাবক জেলা সিপিবি’র সভাপতি অ্যাড. এনাম আহমদ বললেন, ১৮৮৭ সালে প্রতিষ্ঠিত সরকারি জুবিলী উচ্চ বিদ্যালয়ে নিজের সন্তান পড়াশুনা করুক, এটি সুনামগঞ্জের যেকোন অভিভাবকেরই চাওয়া থাকে, শিক্ষার্থীদেরও স্বপ্ন থাকে। এখানে আসন বাড়ানোর জন্য কাজ করা যেতে পারে, কমানোর চিন্তা করার অর্থ হচ্ছে বিদ্যালয়ের শিক্ষার পরিবেশকে সংকুচিত করা। এর আগেও একবার এভাবে শিক্ষার্থীর আসন কমিয়ে দেবার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। শহরের বিশিষ্টজনেরা স্কুলে গিয়ে সেই উদ্যোগ থামিয়ে দিয়েছেন।
শহরের ষোলঘরের বাসিন্দা লেখক সুখেন্দু সেন বললেন, সংকুচিত হবে কেন, উর্ধ্বতন কতৃর্পক্ষ সংকোচনের নির্দেশ দিলেও, আমরা সেটি নিয়ে কথা বলতে পারি, নাগরিকদের চাওয়া তুলে ধরতে পারি, আমরা সংকোচন নয়, আরও সম্প্রসারণ চাই, ছাত্র অনুপাতে শিক্ষক চাই।’
জেলা জামায়েতে ইসলামীর সাবেক সাধারণ সম্পাদক, বর্তমান নায়েবে আমীর শিক্ষক মমতাজুল হাসান আবেদ বললেন, সরকারি জুবিলী উচ্চ বিদ্যালয় জেলার ঐতিহ্যবাহী স্কুল, এই স্কুলের প্রাক্তন শিক্ষার্থী আমরা, শিক্ষার্থীর ভর্তির সংখ্যা আগের চেয়ে বেড়েছে, এখানে কোন ক্লাসেই শিক্ষার্থীর আসন কমানো যাবে না। বর্তমান নীতিমালায় আছে প্রতি সেকশনে ৫৩ জন শিক্ষার্থী ভর্তি করা যাবে। সেক্ষেত্রে সরকারি জুবিলীতে সেকশন বাড়ানো যেতে পারে। শিক্ষার্থীর আসন কেন কমানো হবে। স্কুলে শিক্ষকের স্বল্পতা থাকলে, শিক্ষক পাবার জন্য আমরা বিভিন্ন দপ্তরে যোগাযোগ করবো, প্রয়োজনে শিক্ষক দেবার জন্য আন্দোলন সংগ্রাম করবো।
জেলা বিএনপির সদ্য প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক বর্তমান আহ্বায়ক কমিটির অন্যতম সদস্য অ্যাড. নুরুল ইসলাম নুরুল বললেন, সকল এলাকায় মানুষ বেড়েছে, শিক্ষার্থী বেড়েছে, শিক্ষা—দীক্ষার প্রতি মানুষের আগ্রহ বেড়েছে। শহরের অন্যতম প্রধান বিদ্যাপীঠ সরকারি জুবিলী উচ্চ বিদ্যালয়ে একজন শিক্ষার্থী ভর্তি করানোর জন্য অভিভাবকরা নানা জায়গায় গিয়ে ধরণা দেন। এখানে একসঙ্গে এতো সংখ্যক আসন কমিয়ে দিলে নাগরিকরা হতাশ হবেন। এটা করা যাবে না। শিক্ষক বা অন্য কোন সমস্যা থাকলে আমরা সকলে মিলে সেটি সমাধানের চেষ্টা করবো।
সরকারি জুবিলী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. এনামুল হাসান শাহীন বললেন, জুবিলীতে শিক্ষকের পদ আছে ৫০ জনের। এরমধ্যে আছেন ৪২ জন। দুইজন শিক্ষক বিএড করছেন। ৪০ জন শিক্ষক দিয়ে এতোগুলো সেকশনের পাঠদান করতে হিমসিম খেতে হচ্ছে। একই প্যাটার্নের শিক্ষক দিয়ে পাশের সরকারি এসসি বালিকা বিদ্যালয়ে তারা ষষ্ট থেকে দশম শ্রেণি পড়াচ্ছেন। আমরা পড়াতে হচ্ছে তৃতীয় থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত। তাতে শিক্ষকরা কম মনোযোগ দিতে পারছেন। এই অবস্থায় সকল শিক্ষকের মতামতের ভিত্তিতে এটি করা হয়েছে। তৃতীয় শ্রেণিতে চার সেকশন অব্যাহত রাখতে হলে শিক্ষকের সকল পদ পূরণ রাখা জরুরি বলে মনে করেন তিনি।
বিদ্যালয়ের একজন সিনিয়র শিক্ষক বললেন, আমি ব্যক্তিগতভাবে এভাবে আসন কমিয়ে দেবার পক্ষে নয়। অভিভাবকরা সেটি হয়তো মানবেন না। প্রধান শিক্ষক চাইছেন, এজন্য আমিও তার পক্ষে মত দিয়ে ওই সিদ্ধান্তের রেজুলেশনে স্বাক্ষর করেছি।
বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি জেলা প্রশাসক ড. মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়া বললেন, এই সিদ্ধান্তের বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। হঠাৎ করে এই সিদ্ধান্ত কেন নেওয়া হলো, এটি নিয়ে অবশ্যই কথা বলবো আমি।