সিলেটের কানাইঘাটে একজন নিরক্ষর মানুষের সরলতার সুযোগ নিয়ে কোটি টাকার জমি প্রতারণা করে লিখে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে শাহাবুদ্দিন নামে এক ইউপি সদস্যদের উপর। তিনি কানাইঘাট উপজেলার মৃত আব্দুল মতলিবের ছেলে ও দিঘীরপাড় ইউপির ৮ নং ওয়ার্ডের সদস্য।
সম্প্রতি তার বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ এনেছেন একই ইউনিয়নের মৃত মজম্মিল আলীর ছেলে বুরহান উদ্দিন। এই প্রতারনা কাজে তার সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন কানাইঘাট সাব- রেজিষ্ট্রাটি অফিসের দলিল লেখক ফয়জুর রহমান। কম মূল্যের ১ একর ৪৯ শতক জমির সাথে আরো ১ একর বেশী মুল্যের ১৭ শতক জমি প্রতারনা করে দলিল করে হাতিয়ে নিয়েছেন এই ইউপি সদস্য ।
শাহাবুদ্দিনের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ এনে বুরহান উদ্দিন ৫ নম্বর আমলী কানাইঘাট আদালত ও জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সিলেট আদালতে মামলা দায়েরের করেছেন যাহার ( মামলা নং ৪৩৭)। এবং জেলা রেজিষ্ট্রারী অফিসে লিখিত অভিযোগ দায়েরের করেছেন জমির মালিক বোরহান উদ্দিন।
জানা যায় একটা সময় বোরহান উদ্দিনের টাকার বিশেষ প্রয়োজন হলে জমি বিক্রি করার সিদ্ধান্ত নেন। এই খবর পেয়ে একই ইউনিয়নের বাসিন্দা ৩ নং দিঘিরপাড় ইউনিয়নের ৮ নং ওয়ার্ডের মেম্বার শাহাবুদ্দিন জমি কিনতে আগ্রহ প্রকাশ করেন। পরে তিনি তার মনোনীত দলিল লেখক ফয়জুর রহমান ও রহুল আমীন সহ বোরহান উদ্দিনের সাথে জমি ক্রয় সংক্রান্ত আলাপ আলোচনা করে জমির সকল প্রকার কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করেন।
সবকিছু সঠিক থাকায় শাহাবুদ্দিন জমি কিনতে রাজি হন। আলোচনার মাধ্যমে বিভিন্ন দাগ নম্বরে মোট ১ একর ৪৯ শতক জমির মুল্য ৯ লক্ষ টাকা ধার্য করা হয় এবং জমি রেজিষ্ট্রারি করার তারিখ নির্ধারণ করা হয়। ওই তারিখে সেই টাকা দলিল লেখক ফয়জুর রহমান, রুহুল আমিন, ও সায়মনের মাধ্যমে শাহাবুদ্দিন বোরহান উদ্দিনকে বোঝাইয়া দেন। গত( ৬ জুন ২০২৩ ইং) জমি রেজিষ্ট্রারী সম্পন্ন করা হয়।
ভুক্তভোগী বোরহান উদ্দিন জানান আমি একজন গ্রামের সহজসরল লেখাপড়া না জানা অশিক্ষিত সাধারণ কৃষক মানুষ। আমার টাকার বিশেষ প্রয়োজন হলে জমি বিক্রি করার সিদ্ধান্ত নেই। আমাদের ইউনিয়নের মেম্বার শাহাবুদ্দিন । কানাইঘাট থানা জে,এল, নং-১৮৯ মানিকপুর মৌজা-৫৪০,৫০২,৫৪৩,৫৫৮,৫৫৯,৫৫৪,৬২৯,৬৩৪, ও ৫৩৭ দাগ নম্বরে মোট ১ একর ৪৯ শতক জমি কিনেন । জমি রেজিষ্ট্রারীর পূবে দলিল লেখক ফয়জুর রহমান কাগজপত্র ঠিক আছে বলে আমার কাছ থেকে তাড়াহুড়ো করে সাক্ষর নেন। দলিল সম্পর্কে ও কত শতাংশ লিখছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন যা কথা হয়েছে তা দলিলে লেখা হয়েছে। আমি নিরক্ষর মানুষ সাক্ষর ছাড়া কিছু জানি না।
দলিল সম্পাদনের পর গত (২০ নভেম্বর ২০২৪ইং) তারিখে সকাল বেলা সিলেট জকিগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশে একই মৌজার খতিয়ান ৫৫৩ হাল জরিপি ৬০৯ এর ৫৬,৫৭ ও ৫৮ দাগের অত্যধিক কোটি টাকা দামের মূল্যবান জমি উপজেলার ধনমাইরমাটি ও দক্ষিণ খাসারীপাড়া গ্রামের আব্দুল গফুর ও আব্দুল মুতলিব উল্লেখিত জমিতে মাটি ভরাট করতে আসলে আমি খবর পেয়ে জমি স্থলে গিয়ে তাদের কে জিজ্ঞেস করলে তারা জানায় শাহাবুদ্দিন তাদের কাছে জমি বিক্রি করেছে। এবং আমি নাকি শাহাবুদ্দিনের কাছে জমি বিক্রি করেছি। বিষয়টি শুনিয়া আমি হতবাক হই এবং তাদের কে মাটি না ভরাট করার জন্য অনুরোধ জানাই।
পরে বোরহান উদ্দিন দলিলের সার্টিফাই কপি সংগ্রহ করে জানতে পারেন তার সরলতা ও নিরক্ষতার সুযোগ নিয়ে বিক্রিত ১ একর ৪৯ শতক জমির দলিল সম্পাদনের কালে প্রতারনার আশ্রয় নিয়ে ৫৬,৫৭ ও ৫৮ দাগের আরও ১১৭ শতক ৫০ পয়েন্ট জমি অন্তর্ভুক্ত করিয়া মোট ২ একর ৬৬ শতক ৫০ পয়েন্ট জমি দলিল সম্পাদন ও রেজিষ্ট্রারী করিয়া নিয়াছেন শাহাবুদ্দিন ।
জানা যায়,গত (৪ নভেম্বর ২০২৪ইং) তারিখে এলাকাবাসী দুই পক্ষকে নিয়ে শালিশ বৈঠকে বসেন এবং স্বাক্ষ্য প্রমাণে প্রমাণিত হয় ৫৬’৫৭’ ও ৫৮ দাগের জমি শাহাবুদ্দিন প্রতারনা করিয়া বেশী জমি লিখে নিছেন। অবিলম্বে জমি ফেরৎ দেওয়ার জন্য শালিশ ব্যাক্তিত্ববর্গ শাহাবুদ্দিন কে নির্দেশনা দেন।
বোরহান উদ্দিন অভিযোগ করেন, ‘জমি ফেরত না দিয়ে শাহাবুদ্দিন বিভিন্নভাবে আমাকে হত্যার হুমকি দিচ্ছে। পরবর্তীতে বিষয়টি এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ ও আত্মীয়-স্বজনকে জানাই। তাদের পরামর্শে ইউপি সদস্য শাহাবুদ্দিন, দলিল লেখক ও শনাক্তকারীসহ চারজনের নামে আদালতে মামলা ও জেলা রেজিস্ট্রি অফিসে অভিযোগ করি। আশা করি আমি ন্যায়বিচার পাব।’
শালিশ বৈঠকের মুরুব্বী ময়নুল হক চৌধুরী, ফয়েজ আহমেদ চৌধুরী, মাস্টার সালেহ আহমদ,সহ একাধিক শালিশ ব্যাক্তিত্বগণ জানান বোরহান উদ্দিন ও সাবুদ্দিনের জমি সংক্রান্ত বিষয়টি নিয়ে এলাকায় বেশ কয়েকটি শালিশ বৈঠক হয়েছে। শাহাবুদ্দিন বৈঠকে শিকার করেছেন ভুলবশত ৫৬,৫৭,৫৮ দাগের জমি দলিল হয়ে তার নামে এসেছে। তিনি তা বোরহান উদ্দিনকে ফরত দিবেন। পরবর্তীতে তিনি জমি ফেরত দেননি ।
শাহাবুদ্দিনের প্রতারনার শিকার আরেক ভুক্তভোগী ইউনিয়নের প্রবিন মুরব্বি আব্দুল হাই জানান সে দুই বছর আগে প্রতারনা করে আমার ১৫ শতক জমি দলিল করে নেয়। পরে এলাকাবাসী কে নিয়ে অনেক শালিশ বৈঠক করের মাধ্যমে জমি ফেরত পাই। একই ভাবে বোরহান উদ্দিনের সাথে প্রতারনা করে জমি দলিল করে নিয়েছে। শালিশ বৈঠকে সে তা শিকার করেছে । সুষ্ট তদন্তর মাধ্যমে বোরহান উদ্দিনের জমি ফেরত পাওয়ার ব্যবস্থা করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিকট দাবি জানাই।
ঘটনা বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত ইউপি সদস্য শাহাবুদ্দিনের সাথে একাধিক বার মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেন নি।
এই বিষয়ে দীঘিরপাড় ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল মুমিন চৌধুরী বলেন বোরহান উদ্দিন বিষয়টি আমাকে একবছর আগে জানিয়েছেন তখন আমি চিকিৎসা নিতে ভারতে গিয়েছিলাম । এর মধ্যে এলাকার বিভিন্ন শালিশ বৈঠকে শাহাবুদ্দিন জমি নেওয়া বিষয় শিকার করেছেন মর্মে আমি শুনেছি। দেশে আসার পর তার কাছে এবিষয়ে জানতে চাইলে তিনি হাস্যকর ভঙ্গিতে এড়িয়ে যান।
কানাইঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুল আউয়াল জানান আমরা এই বিষয় অবগত হয়েছি,আইনি প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।