সিলেট নগরীর দাঁড়িয়াপাড়া এলাকায় বল্লব নারায়ণ মৃৎশিল্পালয়ের একটি কক্ষে দেবী দুর্গার প্রতিমা তৈরি করছেন কারিগররা। পাশেই তাদের নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করছেন চারজন পুলিশ সদস্য। সেখানে ২৪ ঘণ্টাই থাকছে পুলিশি পাহারা।
কড়া নিরাপত্তার মধ্যে এবারই প্রথম প্রতিমা তৈরি করছেন বলে জানান দাঁড়িয়াপাড়া এলাকায় কর্মরত কারিগররা।
একইভাবে সিলেট নগরীর আখালিয়া ভটপাড়া, মেজরটিলা শ্যামসুন্দর আখড়ায়ও দেবী দুর্গার প্রতিমা তৈরিতে পুলিশ সদস্যদের পাহারা দিতে দেখা যায়। এই এলাকার বেশ কয়েজন বাসিন্দাও বললেন, আগে কখনো তারা প্রতিমা তৈরিতে পুলিশি পাহারা দিতে দেখেননি।
কারিগররা জানান, প্রতিমার মূল কাঠামো তৈরি শুরু হয়েছে ভাদ্র মাসের প্রথম থেকেই। এখন চলছে ফিনিশিং ও রঙের কাজ।
সরেজমিন দেখা যায়, সিলেট নগরীর দাঁড়িয়াপাড়াসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় দেবী দুর্গার পাশাপাশি গণেশ সরস্বতীসহ বিভিন্ন দেব-দেবীর মূর্তি তৈরি করছেন শিল্পীরা। একদিকে শুকানো প্রতিমাগুলোতে ফিনিশিং দেওয়া হচ্ছে। অন্যদিকে কিছু প্রতিমায় রঙের কাজ করছেন কারিগররা। পাশেই ডিউটিরত চারজন পুলিশ সদস্য।
দাঁড়িয়াপাড়া বল্লব নারায়ণ মৃৎশিল্পালয়ের ডিউটিরত এএসআই মুসা জানান, চারজন পুলিশ সদস্য ২৪ ঘণ্টা এখানে ডিউটি করছেন। প্রতি ৮ ঘণ্টা পরপর শিফট বদল হয়ে নতুন চারজন পুলিশ সদস্য ডিউটিতে আসেন। পাঁচ দিন ধরে এভাবেই ডিউটি চলছে।
বল্লব নারায়ণ মৃৎশিল্পালয়ের কারিগর নন্দলাল বলেন, ‘গত ৫০ বছরে আমাদের কাজে এ রকম ধস নামেনি। অন্য সময় সিলেট নগরীর বাইরে থেকে এখানে প্রতিমা তৈরি করতে আসতেন। কিন্তু এবার নগরীর ভেতরের ছাড়া কেউ প্রতিমা বানাতে অর্ডার দেননি। নগরীর বাইরের মানুষজন মনে করছেন, প্রতিমা তৈরি করতে পারলেও নির্ধারিত স্থানে নিরাপদে নিতে পারবেন না। তাই এবার আর শহরে কেউ প্রতিমা অর্ডার করেননি।’
সিলেট জেলা ও মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদ সূত্রে জানা গেছে, মহানগর ও জেলায় এবার ৫৯৩টি মণ্ডপে পূজার আয়োজন করা হবে। তার মধ্যে মহানগরে ১৫৩টি ও জেলায় ৪৪০টি পূজামণ্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। আগামী ৯ অক্টোবর (বুধবার) মহাষষ্ঠীর তিথিতে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বৃহৎ ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজার মূল আনুষ্ঠানিকতা শুরু হবে। মহাসপ্তমী ১০ অক্টোবর (বৃহস্পতিবার), মহাষ্টমী ১১ অক্টোবর (শুক্রবার), মহানবমী ১২ অক্টোবর (শনিবার) ও ১৩ অক্টোবর (রবিবার) প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের এই বড় ধর্মীয় উৎসব।
সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘প্রতিবছরই পূজায় আমরা বিশেষ নিরাপত্তা দিয়ে থাকি। এবারও এর ব্যতিক্রম হয়নি। প্রতিমা যেখানে বানানো হচ্ছে সেখানে দিন-রাতে ২৪ ঘণ্টা ডিউটিতে আছেন আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। সিলেটে যেখানেই দুর্গাপূজার প্রতিমা বানানো হচ্ছে, প্রায় সব জায়গাতেই পুলিশ বিভিন্নভাবে নজর রাখছে। সাদা পোশাকেও নজরদারি আছে। মোবাইল টিম টহলে আছে। তবে সব জায়গায় ফিক্সড ডিউটি দেওয়া হয়নি। গুরুত্বপূর্ণ জায়গাগুলোতে আমাদের সদস্যরা ফিক্সড ডিউটি করছেন। এ ছাড়া তারাপুর চা-বাগানসহ অন্য সব জায়গায় রুটিন করে দেওয়া আছে। সে অনুযায়ী থানা পুলিশ ও তাদের মোবাইল টিম, ডিবি পুলিশ ও তাদের মোবাইল টিম পৃথকভাবে টহল দেবে। এ ছাড়া যারা পূজার আয়োজন করছেন তাদেরও স্বেচ্ছাসেবী আছেন।’
সিলেট মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক চন্দন বলেন, ‘আমরা প্রতিবছরই বলি পুলিশকে পাহারার জন্য। এ বছর দেখলাম পুলিশ পাহারা দিচ্ছে।
অর্থনৈতিক কারণে হয়তো শহরের বাইরে পূজা কম হচ্ছে। কিন্তু নিরাপত্তার কোনো ঘাটতি নেই। পূজায় নিরাপত্তা দেওয়ার বিষয়টি আমরা সব সময়ই বলে আসছি। আমাদের কাছে নিরাপত্তাহীনতার আশঙ্কার কোনো তথ্য নেই। আমরা আশা করছি, প্রতিবছরের মতো এবারও আমাদের দুর্গাপূজা সুন্দরভাবে উদযাপন হবে।’