আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা ন্যূনতম ৩৫ এবং (শর্ত সাপেক্ষে উন্মুক্ত) দাবিতে রাজধানীর শাহবাগের শিক্ষার্থী সমাবেশ শেষে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনার সামনে অবস্থান নিয়েছেন ৩৫ প্রত্যাশীরা। যতক্ষণ পর্যন্ত তারা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মোহাম্মদ ইউনূসের সাক্ষাৎ না পাবেন, ততক্ষণ পর্যন্ত যমুনার সামনেই অবস্থান নেবেন।
সোমবার (৩০ সেপ্টেম্বর) পৌনে ৪টার দিকে এ ঘোষণা দেন ৩৫ প্রত্যাশী সাধারণ শিক্ষার্থী সমন্বয়ক পরিষদের সংগঠক রাসেল আল মাহমুদ।
রাসেল বলেন, ‘আমাদের যে শান্তি পদযাত্রা ছিল কেন আমাদের ওপর লাঠিচার্জ করা হলো? কেন টিয়ারশেল, রাবার বুলেট ছুঁড়ে গুলিবিদ্ধ করা হলো? আমরা এমন ঘটনার তীব্র নিন্দা প্রতিবাদ জানাচ্ছি। আমাদের একটাই যৌক্তিক দাবি, চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী ৩৫ এবং শর্ত সাপেক্ষে উন্মুক্ত করা। আমাদের যে যৌক্তিক দাবি তার একটাই চূড়ান্ত সুরাহা করা একটিই পথ খুঁজে পেয়েছি, সেটি প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করা। এর বিকল্প কোনো পথ আমাদের নেই, কোনো একান্ত সচিব (পিএস) এর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে আমাদের দাবি বাস্তবায়ন হবে না।’
রাসেল আল মাহমুদ আরো বলেন, ‘আমরা চাই ড. ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ, তার সঙ্গে বসব-কথা বলব এবং দাবি উত্থাপন করব। আমাদের বিশ্বাস প্রধান উপদেষ্টা বিষয়টির চূড়ান্ত সুরাহা করবেন এবং আশা করি তিনি আমাদের দাবি বিষয়ে একমত হয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবেন। যতক্ষণ পর্যন্ত তিনি কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত না জানাচ্ছেন, আমরা এখান থেকে সরছি না। প্রধান উপদেষ্টা যদি বলেন, যে দাবি যৌক্তিক; আমরা এখান থেকে চলে যাবো। আমরা আজকের লিখিত একটি ডকুমেন্ট চাই যে, দাবি যৌক্তিক; খুব শিগগিরই এটি বাস্তবায়ন করা হবে।”
চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা ৩৫ প্রত্যাশী শিক্ষার্থী সমন্বয় পরিষদের অন্যতম সংগঠক মামুন রশিদ রতন ডেইলি বাংলাদেশকে বলেন, আমরা শাহবাগ থেকে পদযাত্রা নিয়ে যমুনার সামনে এলে পুলিশ আমাদের ওপর গুলি এবং টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। আমরা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে, জুলাই বিপ্লবে নেতৃত্ব দিয়েছি কিন্তু আমরা একটিবারের মতো পিছ পা হইনি। আমরা আমাদের দাবিতে অনড় রয়েছি। জানতে পেরেছি, আমাদের বিষয়ে প্রাথমিক আলোচনা চলছে।
এ রিপোর্ট লিখা পর্যন্ত ৩৫ প্রত্যাশীদের যমুনার সামনে অবস্থান নিতে দেখা গেছে এবং বয়সসীমা ৩৫ বাস্তবায়নে অনবরত স্লোগান দিয়ে যাচ্ছেন তারা। এ সময় চাকরি প্রত্যাশীরা হাতে ‘উই ওয়ান্ট নো এজ লিমিট’, ‘চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা ন্যূনতম ৩৫ চাই’, ‘বয়সসীমা মুক্ত করি-স্বপ্ন গড়ি দেশ গড়ি’, ‘শিক্ষা এবং স্বাস্থ্যখাতে বয়সসীমা উন্মুক্ত চাই’, ‘বৈষম্যবিরোধী দেশ গড়তে মেধা ও যোগ্যতারভিত্তিতে নিয়োগ চাই’-ইত্যাদি লেখা সংবলিত প্ল্যাকার্ড হাতে সমাবেশে অংশ নেন।
এদিকে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। পুলিশ, আর্মড পুলিশ ব্যাটেলিয়ন (এপিবিএন) এবং সেনাবাহিনীর সদস্যদের ঘটনা স্থলে অবস্থান নিতে দেখা গেছে।
এর আগে, বেলা দেড়টায় পদযাত্রা নিয়ে ৩৫ প্রত্যাশীরা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনার সামনে অবস্থান নেন। এসময় পুলিশ ৩৫ প্রত্যাশীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। এতে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী আহতও হন বলে দাবি ৩৫ প্রত্যাশীদের।
এদিকে পূর্বঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে বেলা ১১টার দিকে শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা ৩৫ প্রত্যাশী সাধারণ শিক্ষার্থী সমন্বয় পরিষদের ব্যানারে মহাসমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ৩৫ প্রত্যাশী নেতা ডেইলি বাংলাদেশকে বলেন, অনেক আশ্বাস পেয়েছি। অনেক বলা হয়েছে যে, এ নিয়ে সরকার ভাবছে। এখন মানুষ আমাদের হাসাহাসি করে। এভাবে আর কত! আজকে যদি দাবি না মানা হয়, আমরা লাগাতার কঠোর কর্মসূচিতে যাওয়ার পরিকল্পনা করছি। সেটা এই শাহবাগ থেকেই শুরু হবে।