ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর সুনামগঞ্জের ৮৮ ইউনিয়নের বেশিরভাগ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানই উৎকণ্ঠায় দিন কাটাচ্ছেন। চার আওয়ামী লীগ সমর্থক চেয়ারম্যান গ্রেপ্তার হয়েছেন। আওয়ামী লীগের কার্যক্রমে সক্রিয় আরও নয় চেয়ারম্যান দীর্ঘদিন হয় এলাকায় নেই। বিএনপি সমর্থক দুই চেয়ারম্যান মামলার কারণে এলাকায় না থাকায় তাদের অনুপস্থিতেও প্যানেল চেয়ারম্যানদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। সব মিলিয়ে চেয়ারম্যান ছাড়াই চলছে ১৯ ইউনিয়ন পরিষদ।
জেলার দোয়ারাবাজারের নরসিংহপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. নূর উদ্দিন ও বাংলাবাজার ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আবুল হোসেন, ছাতকের উত্তর খুরমা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান বিল্লাল আহমদ আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সক্রিয় পদধারী নেতা। সুনামগঞ্জে গেল চার আগস্টে ছাত্র—জনতার মিছিলে হামলার ঘটনায় দায়ের হওয়া দ্রুত বিচার আইনের মামলায় অজ্ঞাত আসামি হিসেবে গ্রেপ্তার হয়েছেন এরা। তবে বিল্লাল ছাড়া দুইজনের স্থলে এখনো কাউকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দেওয়া হয় নি।
বিশ^ম্ভরপুরের সলুকাবাদ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান নূরে আলম সিদ্দিকী তপন ও পলাশ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সোহেল আহমদ, জামালগঞ্জের বেহেলী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সুব্রত সামন্ত সরকার, বড়দল দক্ষিণ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ইউনুস আলী আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সক্রিয় ও পদধারী হওয়ায় পাঁচ আগস্টের পর এলাকা ছেড়েছেন। তাদের অনুপস্থিতে প্যানেল চেয়ারম্যানদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দিয়েছে জেলা স্থানীয় সরকার বিভাগ।
ছাতকের কালারুকা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল ওদুদকে ছাত্র—জনতার অভ্যুত্থানের সময় শিক্ষার্থীদের উপর হামলার ঘটনায় সিলেটের একটি মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এখানেও প্যানেল চেয়ারম্যানকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এই উপজেলার সিংচাপইড় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান যুবলীগ নেতা সাহাব উদ্দিন সাহেলকে পুলিশ সুনামগঞ্জের চার আগস্টের ছাত্র—জনতার উপর হামলার ঘটনায় করা মামলায় অজ্ঞাতনামা আসামী হিসেবে সম্প্রতি গ্রেপ্তার করতে তার কার্যালয়ে যায়। সেখানে ফেসবুকে লাইভ দিয়ে পুলিশকে হেনস্থা করে পালানোর দায়ে তার উপর পুলিশ এসল্ট মামলা হয়েছে। এরপর থেকে এলাকায় নেই এই চেয়ারম্যান। তবে ওখানে এখনো কাউকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দেওয়া হয় নি।
জেলার শন্তিগঞ্জের দরগাপাশা ও ছাতকের চরমহল্লা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। কিন্তু দীর্ঘদিন হয় এলাকায় না থাকায় তাদের স্থলে প্যানেল চেয়ারম্যানদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। দরগাশা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান বিএনপি নেতা ছুফি মিয়া খুনের মামলার আসামি থাকায় এলাকা ছাড়া।
ছাতকের চরমহল্লা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আবুল হাসনাত ছাতকের একমাত্র বিএনপি’র চেয়ারম্যান। নির্বাচিত হবার পর যুক্তরাজ্য প্রবাসী এই জনপ্রতিনিধি যুক্তরাজ্যে গিয়ে আর ফিরেন নি। একারণে তার স্থলে প্যানেল চেয়ারম্যানকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
সুনামগঞ্জ জেলার ৮৮ ইউনিয়নের মধ্যে ৫৮ জন ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান পাঁচ আগস্টের আগে পর্যন্ত হয় আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সরাসরি যুক্ত ছিলেন। না হয় আওয়ামী লীগের সমর্থক ছিলেন।
বিএনপি সমর্থিত একজন ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান জানালেন, অজ্ঞাত আসামী হিসেবে গ্রেপ্তারের ভয় কাজ করছে আওয়ামী লীগ সমর্থক ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানদের মধ্যে। এদের অনেকেই পদ বাঁচানোর জন্য মাঝে মাঝে অফিসে আসছেন। মনোযোগ দিয়ে কাজ করতে পারছেন না কেউ—ই। তবে পালিয়ে থাকা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানদের কারো কারো বিরুদ্ধে এলাকায় বিগত সময়ে জুলুমবাজির অভিযোগও আছে জানালেন এই ইউপি চেয়ারম্যান।
সুনামগঞ্জ সদর উপজেলা পরিষদের সুরমা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা আমির হোসেন রেজা বললেন, আমি অসুস্থ মানুষ। এক ইউপি সদস্য শত্রুতাবশত আমার বিরুদ্ধে থানায় গিয়ে অভিযোগ করেছে। এজন্য দুইদিন আগে কয়েকঘণ্টা আমাকে থানায় আটক রাখা হয়। পরে পুলিশ বুঝতে পারায় আমি ছাড়া পাই। এভাবে ব্যক্তিগত শত্রুতা মেটানোর চেষ্টাও হচ্ছে এই সময়ে জানালেন এই ইউপি চেয়ারম্যান। এজন্য অনেকে ভয়েও অফিসে আসছেন না বলে জানান তিনি।
অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট স্থানীয় সরকার বিভাগের উপরিচালক মোহাম্মদ রেজাউল করিম বললেন, যারা দায়িত্ব পালন করছেন না, তাদের স্থলে প্যানেল চেয়ারম্যানদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। সব কিছুই স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়ে অবহিত করা হয়েছে। অনুপস্থিত যাদের বিষয়ে এখনো চিঠি দেওয়া হয় নি। দ্রুতই চিঠি প্রস্তুত করে পাঠানো হবে।