- Advertisement -
- Advertisement -
- Advertisement -
- Advertisement -

বাংলাদেশে কোনো সূত্রই কাজ করছে না, শ্রীলংকায় মূল্যস্ফীতি মাইনাসে

- Advertisement -

 

গোটা দক্ষিণ এশিয়ায় মূল্যস্ফীতি এখন সবচেয়ে বেশি নিয়ন্ত্রণে শ্রীলংকায়। সেপ্টেম্বরে দেশটিতে মূল্যস্ফীতির হার ছিল মাইনাস বা ঋণাত্মক দশমিক ৫ শতাংশ।

গোটা দক্ষিণ এশিয়ায় মূল্যস্ফীতি এখন সবচেয়ে বেশি নিয়ন্ত্রণে শ্রীলংকায়। সেপ্টেম্বরে দেশটিতে মূল্যস্ফীতির হার ছিল মাইনাস বা ঋণাত্মক দশমিক ৫ শতাংশ। সে অনুযায়ী সেপ্টেম্বরে দেশটিতে মূল্যস্ফীতি নয়, মূল্য সংকোচন হয়েছে। অর্থাৎ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম কমেছে।

অন্যদিকে গত মাসেও এ অঞ্চলে মূল্যস্ফীতির হার সবচেয়ে বেশি ছিল বাংলাদেশে। দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে এখানে ৯ শতাংশের ওপরে রয়েছে সার্বিক মূল্যস্ফীতি। এ অঞ্চলে অর্থনৈতিকভাবে সবচেয়ে দুর্দশাগ্রস্ত পাকিস্তানেও এখন মূল্যস্ফীতির হার বাংলাদেশের চেয়ে কম। সুদহার বৃদ্ধি, পণ্য আমদানি ও বাজার নজরদারির মতো ব্যবস্থা নিয়েও বাংলাদেশে নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছে না মূল্যস্ফীতি। এর মধ্যে নতুন করে শঙ্কা তৈরি করছে প্রতিবেশী ভারতে খাদ্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি। সেখানেও এখন মূল্যস্ফীতির হার ৫ শতাংশ ছাড়িয়েছে।

দক্ষিণ এশিয়ার সাত দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, এ অঞ্চলের মধ্যে শ্রীলংকায় গত মাসে মূল্য সংকোচন হয়েছে দশমিক ৫ শতাংশ। মালদ্বীপ ও ভুটানে সেপ্টেম্বরের মূল্যস্ফীতির তথ্য এখনো প্রকাশ হয়নি। আগস্টে সেখানে মূল্যস্ফীতির হার ছিল ১ দশমিক ৪ শতাংশ। ভুটানে এ হার ২ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ। অন্য দেশগুলোর মধ্যে সেপ্টেম্বরে নেপালে ৩ দশমিক ৮৫ শতাংশ, ভারতে ৫ দশমিক ৪৯ ও পাকিস্তানে ৬ দশমিক ৯০ শতাংশ হারে মূল্যস্ফীতি হয়েছে।

ডলারসহ অর্থনৈতিক সংকটের প্রভাবে মূল্যস্ফীতি উসকে ওঠা দেশগুলোর একটি ছিল শ্রীলংকা। দুই বছর আগে ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে দক্ষিণ এশিয়ার দ্বীপরাষ্ট্রটির মূল্যস্ফীতির হার ঠেকে ৭০ শতাংশে। বৈদেশিক দায় পরিশোধে ব্যর্থতায় নিজেদের দেউলিয়া ঘোষণা করা দেশটির মূল্যস্ফীতি গত আগস্টে ছিল দশমিক ৫ শতাংশ। আর গত মাসে তা দাঁড়িয়েছে ঋণাত্মক দশমিক ৫ শতাংশে।

দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে পাকিস্তানে মূল্যস্ফীতির হার দীর্ঘদিন ধরেই ছিল দুই অংকের ঘরে। অর্থনৈতিক সংকটে হাবুডুবু খাওয়া দেশটির মূল্যস্ফীতির হারও এরই মধ্যে এক অংকের ঘরে নেমে এসেছে। গত আগস্টে দেশটিতে মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৯ দশমিক ৬৪ শতাংশ। সর্বশেষ গত সেপ্টেম্বরে এটি আরো কমে ৬ দশমিক ৯ শতাংশে নেমে এসেছে। যদিও এক বছর আগে ২০২৩ সালের আগস্টে দেশটিতে মূল্যস্ফীতি ছিল ২৭ শতাংশেরও বেশি।

বাংলাদেশের সবচেয়ে বৃহৎ ও নিকটতম প্রতিবেশী ভারতে এক বছর ধরেই সার্বিক মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশের নিচে ছিল। তবে গত বছরের ডিসেম্বরে এবং চলতি বছরের জুনে দেশটিতে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ৯ শতাংশের ওপরে উঠে যায়। অবশ্য গত জুলাই ও আগস্টে দেশটির খাদ্য মূল্যস্ফীতি ছিল যথাক্রমে ৫ দশমিক ৪২ ও ৫ দশমিক ৬৬ শতাংশ। কিন্তু গত সেপ্টেম্বরে ভারতে হঠাৎ করেই খাদ্য মূল্যস্ফীতি বেড়ে ৯ দশমিক ২৪ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। মূলত আবহাওয়াজনিত কারণে দেশটিতে পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ার প্রভাবে খাদ্য মূল্যস্ফীতি বেড়েছে। এ সময়ে দেশটিতে খাদ্যশস্য, ডাল, ভোজ্যতেল, ডিম ও সবজির দাম বেড়েছে। ভারতের বাজারে খাদ্যপণ্যের দাম বাড়লে সেটি বাংলাদেশের জন্যও শঙ্কা তৈরি করে। কারণ দেশের নিত্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে ভারত থেকে বিভিন্ন সময়ে পণ্য আমদানি করা হয়ে থাকে। যেমন সাম্প্রতিক সময় ডিমের বাজার নিয়ন্ত্রণে ভারত থেকে ডিম আমদানির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এ অবস্থায় ভারতে খাদ্যপণ্যের দাম বাড়লে সেটি দেশের বাজারেও অস্থিরতা তৈরি করতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ এবং ইনস্টিটিউট ফর ইনক্লুসিভ ফাইন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (আইএনএম) নির্বাহী পরিচালক ড. মুস্তফা কে মুজেরী বণিক বার্তাকে বলেন, ‘ভারতে জিনিসপত্র বিশেষ করে খাদ্যপণ্যের দাম বেড়ে গেলে তারা তাদের স্থানীয় ভোক্তাদের সুরক্ষা দেয়ার জন্য তখন রফতানির ক্ষেত্রে বাড়তি শুল্ক আরোপ করা, পণ্যের রফতানি মূল্য বৃদ্ধি এবং ক্ষেত্রবিশেষে রফতানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপের মতো পদক্ষেপ নিয়ে থাকে। অতীতে বিভিন্ন সময়ে এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে। আমদানি ব্যয় কম হওয়ার পাশাপাশি সময় কম লাগার কারণে স্বাভাবিকভাবেই আমদানিকারকরা সবার প্রথমে ভারত থেকে পণ্য আনার চেষ্টা করে থাকেন। কিন্তু ভারতে পণ্যের দাম বেড়ে গেলে আমরা কিন্তু এ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হব। তখন আমাদের পণ্য আমদানির জন্য দূরবর্তী বাজারের খোঁজ করতে হবে। এতে আমদানি ব্যয় বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি সময়ও বেশি লাগবে। ভারতে মূল্যস্ফীতি বাড়া মানে আমাদের জন্য অশনিসংকেত তৈরি হয়। এ অবস্থায় আমরা যদি মূল্যস্ফীতি কমিয়ে আনার পাশাপাশি স্থানীয় পর্যায়ে উৎপাদন বাড়াতে পারি, তাহলে আর বিদেশ থেকে পণ্য আমদানি করতে হবে না। এতে করে অন্য কোনো দেশে পণ্যের দাম বেড়ে গেলেও আমাদের দুশ্চিন্তা করতে হবে না। বন্যার কারণে যে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, সেগুলোকে কাটিয়ে ওঠার জন্য নেয়া ব্যবস্থাগুলোকে আরো জোরদার করতে হবে। সামনে বোরো মৌসুম আসছে। যদি আমরা স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে বোরোর বাম্পার ফলন নিশ্চিত করতে পারি, তাহলে সেটি মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বড় ভূমিকা রাখবে। আগামী দিনগুলোয় বিশ্ববাজারে খাদ্যপণ্যের দাম বাড়ার পূর্বাভাস রয়েছে। এ অবস্থায় স্থানীয় উৎপাদন বাড়ানোর দিকে আমাদের সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে।’

গত ২৭ মাস দেশের মূল্যস্ফীতি ৯ শতাংশের বেশি। এর মধ্যে ২০২২-২৩ অর্থবছরের পুরো সময়ে ৯ শতাংশের ওপরে ছিল বাংলাদেশের সার্বিক মূল্যস্ফীতি। গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি আরো বেড়ে ৯ দশমিক ৭৩ শতাংশে দাঁড়ায়। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম তিন মাসেও এ ঊর্ধ্বমুখিতা বজায় থাকতে দেখা গেছে। সর্বশেষ গত সেপ্টেম্বর শেষে দেশের সার্বিক মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ৯২ শতাংশে। এর মধ্যে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ১০ দশমিক ৪০ ও খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি ৯ দশমিক ৫০ শতাংশ। সব মিলিয়ে টানা দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে দেশে উচ্চ মূল্যস্ফীতি বিরাজ করছে। সেপ্টেম্বরে আগস্টের তুলনায় পরিসংখ্যানগতভাবে মূল্যস্ফীতি কিছুটা কম দেখালেও বাজারে নিত্যপণ্যের দামে এর তেমন কোনো প্রভাব নেই। বরং চলতি মাসে ডিম, মুরগি ও সবজির দামে আরেক দফা ঊর্ধ্বমুখিতা দেখা গেছে।

দেশের নিত্যপণ্যের বাজারে এ মাত্রার ঊর্ধ্বমুখিতা এত দীর্ঘ সময় বিরাজ করতে দেখা যায়নি। দ্রব্যমূল্যের ক্রমাগত বৃদ্ধিতে কমছে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা ও প্রকৃত আয়। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দীর্ঘদিন ধরে নিয়ন্ত্রণ করতে না পারা এ মূল্যস্ফীতির জন্য দায়ী করা হয়েছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধসহ বহিস্থ বা দেশের বাইরের উপাদানগুলোকে। যদিও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাম্প্রতিক এক মূল্যায়ন প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, দেশে মূল্যস্ফীতি জেঁকে বসেছে মূলত অভ্যন্তরীণ উপাদানগুলোর কারণেই।

মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের প্রচলিত পদ্ধতি সুদের হার বাড়ানোর পথেই হাঁটছে দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সম্প্রতি নীতি সুদহার বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করা হয়েছে। যদিও বাংলাদেশের আর্থিক ব্যবস্থার সঙ্গে মানুষের সম্পৃক্ততা কম থাকার কারণে উন্নত বিশ্বের মতো কেবল সুদহার বাড়ানোর মতো পদক্ষেপ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে কাজে দেবে কিনা সেটি নিয়ে সংশ্লিষ্টদের মধ্যে সংশয় রয়েছে। খোদ অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারাও মনে করছেন বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে শুধু সুদহার বাড়িয়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে চাঁদাবাজি ও সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য বন্ধের পাশাপাশি কার্যকর বাজার ব্যবস্থাপনার মাধ্যমেই মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব বলে মনে করছেন তারা।

Share This Article
- Advertisement -
- Advertisement -
- Advertisement -
- Advertisement -
- Advertisement - - Advertisement -

সম্পর্কিত আরও পড়ুন

ছাতকে রশীদিয়া মাদ্রাসা গণক্ষাই পরিদর্শন করেন শিক্ষা বান্ধব ওসি শফিক

ছাতক উপজেলার রশীদিয়া মাদ্রাসা গণক্ষাই পরিদর্শন করেছেন ছাতক থানার অফিসার ইনচার্জ শফিকুল…

ডেক্স নিউজ ডেক্স নিউজ

ছাতক থানায় সৌন্দর্যবর্ধনে ওসি সফিকুল ইসলাম খানের ব্যতিক্রমী উদ্যোগ

সুনামগঞ্জের ছাতক থানায় যোগদানের পর থেকেই থানা প্রাঙ্গণকে পরিচ্ছন্ন ও দৃষ্টিনন্দন করে…

ডেক্স নিউজ ডেক্স নিউজ

জাদুকাটা নদী রক্ষায় মানববন্ধন

সুনামগঞ্জের তাহিরপুর সীমান্তের জাদুকাটা নদীর বালি মহাল ইজারা বাতিল এবং নদীটিকে পরিবেশ…

ডেক্স নিউজ ডেক্স নিউজ

মাদরাসার সভাপতিকে না জানিয়ে ভুয়া নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি: চরম ক্ষোভ ও বিভ্রান্তি

ছাতকের ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আল মুনীর জামেয়া ইসলামিয়া দাখিল মাদরাসার নাম ব্যবহার…

ডেক্স নিউজ ডেক্স নিউজ

ছাতক নৌ পুলিশের অভিযানে ভারতীয় নাছির বিড়িসহ ১জন আটক

ছাতকে নৌ পুলিশের অভিযানে ৪২ হাজার ভারতীয় নাছির বিড়িসহ একজন কে আটক…

ডেক্স নিউজ ডেক্স নিউজ

দেশের উন্নয়ন, রাজনীতি ও সমাজ গঠনে প্রবাসীরা ভূমিকা রাখছেন- লুনা

বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্ঠা, সিলেট-২ আসনে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী ও নিখোঁজ বিএনপি নেতা…

ডেক্স নিউজ ডেক্স নিউজ

আমার বাস্তবায়িত উন্নয়নের মাধ্যমেই আপনারা ইলিয়াস আলীকে খুঁজে পাবেন

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)’র আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের…

ডেক্স নিউজ ডেক্স নিউজ

ছাতকে বিভিন্ন ব্যাংক শাখার উদ্যেগে প্রকাশ্যে কৃষি ঋণ বিতরণ অনুষ্ঠান

ছাতকে বিভিন্ন ব্যাংক শাখার উদ্যোগে এবং সোনালী ব্যাংক ছাতক শাখার আয়োজনে ব্যাপক…

ডেক্স নিউজ ডেক্স নিউজ
- Advertisement -
- Advertisement - - Advertisement -