পরিবেশ, বন ও জলবায়ূ পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, হাওরের বোরো ধান রক্ষায় ফসলরক্ষা বাঁধ নির্মাণে কেউ অনিয়ম করলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। নির্ধারিত সময়ে বাঁধের কাজ শেষ হবে। অনিয়ম, কাজে বিলম্ব যাতে না হয় সেজন্য যতটুকু আগাম প্রস্তুতি নেওয়া প্রয়োজন আমরা নিয়েছি। কোনো অপরিকল্পিত বাঁধ নেওয়া হবে না। কোনো বাঁধের কারণে ফসলের বা মাছের ক্ষতি হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মঙ্গলবার দুপুরে তাহিরপুরের মাটিয়ান হাওর পরিদর্শন শেষে গণমাধ্যমকর্মীদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, পিআইসি গঠন ও সার্ভে করার কাজ শুরু হয়ে গেছে। বইয়ে যে সময়টা লেখা আছে, প্রকৃতিতো সেই সময় অনুসরণ করে না। প্রকৃতি কখনও পনেরো বিশ তারিখের মধ্যে পানি নামিয়ে দেয়, কখনও নভেম্বরেও নামে না। এই বিষয়গুলো সামনে রেখেই বাঁধের করতে হচ্ছে।
তিনি বলেন, হাওরাঞ্চলের লাখো লাখো মানুষ বোরো ফসলের উপর নির্ভরশীল। আমাদের সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে যাতে বড় ধরনের বন্যা আসার আগে কৃষকরা সোনালি ধান ঘরে তুলতে পারে।
এদিকে, বিকালে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে কাবিটা কাজ বাস্তবায়ন সংক্রান্ত মতবিনিময় সভায়সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, এখন বাঁধের কাজ শুরু করে দেয়ার সময়, পুরো সিস্টেম বদলাতে গেলে কাজই হবে না। আমাদের কাজ করতে হবে। কৃষকের ফসল নিরাপদ করতে আপাতত গণ—শুনানি করে পিআইসি গঠন করতে হবে। ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে কাজ শুরু করতে হবে। কাজের অগ্রগতি জানতে সময়ে সময়ে জুম মিটিং হবে জানিয়ে তিনি বলেন, যখন যে এলাকায় জুম মিটিং হবে, সেখানে কৃষক প্রতিনিধি, পিআইসি, মনিটরিং কমিটির সদস্যরা থাকবেন। বাঁধের সাইনবোর্ড বিভিন্ন জায়গায় লাগাতে হবে। বাঁধ নির্মাণের বিষয়টি মানুষকে জানাতে হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
অন্তভূর্ক্তিমূলকভাবে কীভাবে বাঁধের কাজ শেষ করা যায় সেটা জেলা প্রশাসককে দেখার জন্যও বলেন তিনি। জমির মালিক নয় যে কৃষক, বা যারা বর্গা চাষ করেন, তারা কেন কমিটিতে অন্তর্ভূক্ত হতে পারেন না প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, কৃষি কাজে সম্পৃক্ত এমন মানুষ কমিটিতে নিলে সমস্যা কোথায়? এটা নিয়ে সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলদের সঙ্গে কথা বলবেন বলেও জানান তিনি।
হাওরে স্থায়ী অবকাঠামোনা করার অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, নেত্রকোণায় সড়কের জন্য একটা হাওর মরে যাচ্ছে। তিনি বলেন, ‘পার্মানেন্ট স্টাকচার করার পর আপনি দেখেন বা বুঝেন যদি চলনবিল—মিঠামইনের মতো ক্ষতির মুখে পড়েছেন, তখন আর সংশোধন করার উপায় কম থাকে।
তিনি বলেন, হাওর বাংলাদেশ ছাড়া কোথাও নাই, টাঙ্গুয়ার হাওর রামসার সাইট, এটাকে বাঁচিয়ে রেখে কাজ করতে হবে।হাওরে স্থানে স্থানে রাস্তা করায় মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, হাওরই যদি না থাকে, তাহলে হাওরের রাস্তা দিয়ে কি করবো আমরা?
প্রসঙ্গত. সভায়পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে জানানো হয়, এ বছর ১৩৪ হাওরের বোরো ধান রক্ষায় ১৭০০ কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণ করা হবে।পরিবেশের ক্ষতি করে এমন কোন প্রকল্প হাওরে হবে না পরিবেশ, বন ও জলবায়ূ পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, ‘হাওরে যেভাবে পলিথিন দেখলাম, এসব বিষয়ে আমরা একটি পরিকল্পনা হাতে নিচ্ছি। হাওরের পরিবেশ—প্রকৃতি কীভাবে ঠিক থাকবে, তা নিয়ে একটি পরিকল্পনা করছি।’ উল্লেখ করে পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা বলেন, এবার ফসল রক্ষা বাঁধের বরাদ্দের নামে অহেতুক কোন প্রকল্প নেওয়া হবে না, যা পরিবেশের ক্ষতি করে। এক কথায় পরিবেশ রক্ষা করেই বাঁধ নির্মাণ করা হবে।
পাশাপাশি টাঙ্গুয়ার হাওরে টুরিজম কার্যক্রম চলবে, তবে তা নিয়ন্ত্রিত এবং পর্যাপ্ত নজরদারির মধ্যে থাকবে উল্লেখ করে উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান আরো বলেন, কতো লোক আসতে পারবে, কতো টুরিস্টবোট চালতে পারবে, হাউজবোট কোন কোন নিয়ম মেনে চলবে, প্লাস্টিক পলিথিন আনবে কিনা, জোরে জোরে গান বাজাবে কিনা, এগুলো সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা চলছে। ইতিমধ্যে এই কার্যক্রমগুলো যারা করে তাদের কাছ থেকে কিছু পরামর্শ নিয়েছি।
হাওরের পর্যটন নিয়েতিনি বলেন, টাঙ্গুয়ার হাওর পর্যটন জোন হিসেবে থাকবে, তবে সেটি নিয়ন্ত্রিত। কতো লোক আসতে পারবে, কতো টুরিস্টবোট চলতে পারবে, হাউজবোট কোন নিয়মগুলো মেনে চলবে, প্লাস্টিক পলিথিন আনবে কিনা, জোরে জোরে গান বাজাবে কিনা, এগুলো সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করা হবে। ইতিমধ্যে এই কার্যক্রমগুলো যারা করে তাদের কাছ থেকে আমরা কিছু পরামর্শ নিয়েছি।
জেলা প্রশাসককে সকলকে নিয়ে মতবিনিময় করে ট্যুরিজম মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কথা বলে একটি প্রয়োগযোগ্য বিধিমালা করে দেবারও পরামর্শ দেন তিনি।